ইমাম হাসান (রা:) : আশ্চর্যজনক জীবনী
Emam Hasan ( A.)। Emam Hasan ( R.)। Hijri। Mohanobi Hazrat Muhammad (S.)। Islam। Muslim। Quran। Hadis। Hadith। Karbala। Historical character of islam। Important person। Fatema ( R.)। Ali ( R.)। Son of Ali (R.) and Ayesha ( R.)।
ইমাম হাসান (আ.) ৩য় হিজরী’র ১৫ই রমজানের রাতে মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) ও নারীকূলের শিরোমনি হযরত ফাতেমা যাহরা (সা আ.) এর প্রথম সন্তান।
জন্ম ও শৈশব:
ইমাম হাসান (আ.) ৩য় হিজরী’র ১৫ই রমজানের রাতে মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) ও নারীকূলের শিরোমনি হযরত ফাতেমা যাহরা (সা আ.) এর প্রথম সন্তান।
হযরত মহানবী (স.) তাঁর জন্মের পর তাঁকে কোলে তুলে নিয়ে তাঁর বাম কানে ইকামত দেন। অতঃপর একটি দুম্বা কুরবানী করেন এবং তার মাথার চুল কামিয়ে সে চুলের ওজনে রূপা দরিদ্র ও অভাবীদের মাঝে বিতরণ করে তাঁর মাথায় আতর লাগাতে বলেন। আর তখন হতেই মাথার চুলের ওজনে সাদকা দেওয়া ও আকিকা করা একটি সুন্নতে পরিণত হয়।
মহানবী (স.) এ নবজাতকের নাম রাখলে হাসান। জাহিলিয়্যাতের যুগে যে নাম পূর্বে কখনও ব্যবহৃত হয়নি। কুনিয়া হিসেবে ‘আবু মুহাম্মাদ’ নামটিকে তাঁর জন্য বেছে নিলেন। আর এটাই হল তাঁর একমাত্র কুনিয়া। তাঁর উপাধী সমূহের মধ্যে সিবত, সাইয়্যেদ, যাকি, মুজতবা উল্লেখযোগ্য, এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ উপাধিটি হচ্ছে মুজতবা।
মহানবী (স.) ইমাম হাসান (আ.) ও তাঁর ভাই ইমাম হুসাইন (আ.) কে অত্যন্ত ভালবাসতেন। তিনি বারংবার বলতেন: হাসান ও হুসাইন আমার সন্তান। আমিরুল মু’মিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)ও তাঁর (স.) কথাকে স্মরণ করে নিজের অন্যান্য সন্তানদেরকে বলতেন: তোমরা আমার সন্তান এবং হাসান ও হুসাইন আল্লাহর রাসূল (স.) এর সন্তান।
হযরত মহানবী (স.) এর সান্নিধ্যে ইমাম হাসান (আ.)
তিনি শৈশবের ৭টি বছর নিজের নানা রাহমাতুল লিল আলামিন হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন। মহানবী (স.) তাকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। এমনভাবে যে, তাকে কাঁধে নিয়ে বলতেন: হে প্রভু! আমি একে ভালবাসি তুমিও একে ভালবেসো…। যে ব্যক্তি হাসান ও হুসাইন (আ.) কে ভালবাসে, তারা প্রকৃতপক্ষে আমাকে ভালবেসেছে। আর যে ব্যক্তি এঁদের সাথে হিংসা করবে এবং এঁদের সাথে শত্রুতা করবে তারা প্রকৃতপক্ষে আমার সাথে শত্রুতা করেছে।
তিনি (স.) আরো বলেন: ‘হাসান এবং হুসাইন বেহেশতের যুবকদের সর্দার’।
তিনি (স.) বলেছেন: এঁরা দু’জন ইমাম; চাই তারা শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বা সন্ধি করে নেয়।
তাঁর বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও মহানবী (স.) তাকে কিছু কিছু চুক্তির ক্ষেত্রে সাক্ষী হিসেবে রাখতেন। ওয়াকেদী বর্ণনা করেছে যে, সাকিফ গোত্র মহানবী (স) এর সাথে একটি (যিম্মাহ) চুক্তি বদ্ধ হয়। উক্ত চুক্তিনামাটি খালেদ বিন সায়াদ লিখেন এবং তিনি (স.) হযরত হাসান হুসাইন (আ.) কে সাক্ষী হিসেবে রাখেন।
এছাড়া যখন আল্লাহর রাসূল (স.) নাজরানবাসীদের সাথে মোবাহেলার জন্য যান তখন ইমাম হাসান, ইমাম হুসাইন, ইমাম আলী (আ.) ও হযরত ফাতেমা (সা. আ.) কে আল্লাহর নির্দেশে নিজের সঙ্গে নিয়ে যান। আর তাতহীরের (পবিত্রতার) আয়াত তাদের পবিত্রতার সাক্ষ্য হিসেবে অবতীর্ণ হয়।
পিতার সাথে ইমাম হাসান (আ.)
ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.) স্বীয় পিতাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করতেন। যখন হযরত আবুযার (রা.) কে রাবযা’য় নির্বাসনে দেয়া হল তখন হযরত উসমানের নির্দেশে তাকে বিদায় জানাতে কারো উপস্থিত হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল। কিন্তু ইমাম হাসান (আ.) স্বীয় পিতা ও ভাই ইমাম হুসাইন (আ.) এর সাথে ওসমানের অন্যায্য নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে রাসূল (স.) এর প্রাণপ্রিয় সাহাবী হযরত আবুযার গিফারী’কে বিদায় জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন। আর তাঁকে বিদায়ের মুহূর্তে তারা উসমানী সরকারের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং আবুযার গিফারী (রা.) কে ধৈর্য্য ধারণের উপদেশ দেন।
তিনি ৩৬ বছর বয়সে স্বীয় পিতার সাথে, হযরত আয়েশা ও তালহা কর্তৃক ঘটানো উষ্ট্রের যুদ্ধের কাজ সমাধা করতে মদিনা হতে বসরায় যান।
বসরায় প্রবেশের পূর্বে তিনি আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) এর নির্দেশে রাসূল (স.) এর প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আম্মার বিন ইয়াসির (রা.) এর সাথে কুফাবাসীদেরকে আলী ইবনে আবি তালিবের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানাতে কুফায় যান। অতঃপর তিনি আমিরুল মু’মিনীন (আ.) এর নির্দেশ মোতাবেক কুফাবাসীদেরকে সাথে নিয়ে স্বীয় পিতার সাথে যোগদান করেন।
ইমাম হাসান (আ.) এর সাথে মুসলমানদের বাইয়াত
যখন আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) মসজিদে কুফায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে গুরুতর আহত হলেন। তখন ইমাম হাসান (আ.) তাঁর নির্দেশে নামাযের ইমামতি করেন এবং তিনি জীবনের শেষ মুহূর্তেও ইমাম হাসান (আ.) কে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে পরিচয় করিয়ে যান।
তিনি বলেন: হে আমর পুত্র! আমার (মৃত্যুর) পর আমার স্থানে আসীন হবে…’ অতঃপর তিনি ইমাম হুসাইন (আ.) ও মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়া এবং তাঁর অপর সন্তানদেরকে ও শিয়া নেতৃবৃন্দকে এ ওসিয়তের উপর সাক্ষ্য হিসেবে রেখে ইমাম হাসান (আ.) কে স্বীয় গ্রন্থ ও অস্ত্র দান করে বলেন: হে আমার পুত্র! আল্লাহর রাসূল (স.) আমাকে ওসিয়ত করেছিলেন যাতে আমি তোমাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেই, যেভাবে তিনি আমাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন এবং নিজের কিতাব ও অস্ত্রকে আমায় দান করেছেন। আর তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে তোমাকে নির্দেশ দেই যেন নিজের জীবনের শেষ মুহূর্তে এগুলোকে তোমার ভাই হুসাইনের নিকট হস্তান্তর কর’।
ইমামা হাসান (আ.) সমবেত মুসলমানদের মাঝে এসে মেম্বরে উঠে স্বীয় পিতা আমিরুল মু’মিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) এর শাহাদতের ব্যাপারে মানুষকে অবগত করতে চাইলেন। তখন তিনি মহান আল্লাহর প্রশংসা ও আল্লাহর নবী (স.) এর উপর দরুদ প্রেরণ পূর্বক আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) এর তাকওয়া, ইসলামের বিভিন্ন যুদ্ধে তার সাহসিকতা ও বিজয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন : ইন্তেকালের পূর্বে তাঁর নিকট শুধুমাত্র ৭ শত দিরহাম ছিল। যার বিনিময়ে তিনি নিজের পরিবারের জন্য একজন গৃহ পরিচারক ক্রয় করতে চেয়েছিলেন।
এমতাবস্থায় জামে মসজিদ লোকে ভর্তি ছিল। উবাইদুল্লাহ ইবনে আব্বাস দাঁড়িয়ে লোকদেরকে হযরত হাসান ইবনে আলী (আ.) এর হাতে বাইয়াত করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন। মুসলমানরা স্বেচ্ছায় হাসান ইবনে আলী (আ.) এর হাতে বাইয়াত করলেন।
কুফা, মাদায়েন, ইরাক, হেজায ও ইয়েমেনের লোকেরা স্বেচ্ছায় হযরত ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.) এর হাতে বাইয়াত করলেন। মোট কথা মুয়াবিয়া ব্যতীত অপর সকলেই ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.) এর হাতে বাইয়াত করলেন।
.