শিক্ষার মাধ্যম কি হওয়া উচিত? বাংলা না ইংরেজী?
শিক্ষার মাধ্যম বাংলা হওয়ার উপকারিতা
মাতৃভাষার গুরুত্ব যাদের কাছে যত বেশি সভ্যতার ইতিহাস থেকে জানা যায় তারা ততো বেশি এগিয়ে। মাতৃভাষার গুরুত্ব ব্যতীত
পৃথিবীর কোন জাতিই উন্নতি লাভ করতে পারেনি। ইংরেজরা যতদিন ফরাসি ভাষাকে তাদের মাতৃভাষার উপর অবস্থান নিয়েছিল ততদিন সে দেশের সাহিত্যের কোন উন্নতি সাধন হয়নি। জেমস যেদিন মাতৃভাষায় পবিত্র বাইবেল অনুবাদ করে দেশের মানুষের মাতৃভাষা ও বাইবেল উভয়কেই মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করলেন সেদিনের পর থেকেই ইংরেজদের সাহিত্য ব্যাপ্তির সূত্রপাত ঘটে। আবার জাপানের ক্ষেত্রে যদি আমরা লক্ষ করি তারা একসময় প্রাচ্যের শিক্ষা গ্রহণ করেছিল বলে তাদের অগ্রযাত্রা স্থবির হয়ে ছিল। তারপর পরবর্তীতে মাতৃভাষার মাধ্যমেই তাদের অগ্রযাত্রা বেগবান হয়।
আবার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট থেকে দেখা যায়, বাংলা মাধ্যমের বইগুলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সহজপাঠ্য। এখানে বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা দেওয়া হয় যা একজন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে নিজ দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল করে।
শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি হওয়ার অপকারিতা
ইংরেজি মাধ্যমের বইগুলোতে তার বিপরীতে অবস্থান লক্ষ্যণীয়। এখানে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য থাকে উপেক্ষিত।
যার ফলে একজন মিডিয়ামের শিক্ষার্থী দেশের ইতিহাস ,ঐতিহ্য অর্জন সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকার দরুন দেশকে যথাযথ উপলব্ধি দিয়ে ভালোবাসতে পারে না। দেশের নাগরিক দেশকে ভালোবাসতে না পারলে দেশের উন্নতিও সর্বোপরি ব্যাহত হয়।
শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি হওয়ার উপকারিতা
উল্লেখ্য যে বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য ছাড়া অন্যান্য সকল বিষয় বর্তমানে ইংরেজিতে পড়ানো হয়। ফলে এই সকল বিষয় পারঙ্গম করার জন্য ইংরেজির বিকল্প নেই। ইংরেজি মাধ্যমে ছোট থেকেই শিক্ষার মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার সময় সমগ্র প্রক্রিয়াটি সহজতর হবে।
ইংরেজি মাধ্যমের বইগুলোতে উন্নত বিশ্বের শিক্ষা কারিকুলাম অনুসরণ করা হয় বলে শিক্ষার্থীরা হালনাগাদকৃত তথ্যসমূহ আয়ত্ত করতে পারে।
আবার ইংরেজী মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্বের শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় বলে শিক্ষার্থীরা সর্বাধুনিক শিক্ষা পেয়ে থাকে।
অন্যদিকে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও রয়েছে।
বাংলা মাধ্যমে শিক্ষার অপকারিতা
সাধারণত বাংলা মাধ্যমের কারিকুলামের তথ্য ও জ্ঞান যথাযথ সময়ে হালনাগাদ করা হয় না। যা শিক্ষার্থীদের পুরনো ধ্যান-ধারণা নিয়ে বেড়ে উঠতে বাধ্য করে, আধুনিকতা থেকে বঞ্চিত হয়।
বস্তুত কি হওয়া উচিত?
জ্ঞান-বিজ্ঞানে ভাষা হিসেবে বাংলা যেন আরো সমৃদ্ধ হয় সে চেষ্টা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন, আবার আপাতত উন্নয়নের ভাষা হিসেবে ইংরেজি মনেপ্রাণে গ্রহণ করে তাকে আরও ভালোভাবে সেখার বিকল্প নেই।
মনে রাখতে হবে, সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনীতি কারণে যখন কোন জাতি তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিসর্জন দেয় তখন তারা তাদের নিজস্ব জাতিসত্তাকেই হারিয়ে ফেলে। আর নতুন কিছু শিখতে গিয়ে নিজের সত্তাকে হারিয়ে ফেলার থেকে বিপদ আর কিছুতেই হতে পারে না। মাতৃভাষাকে কেন্দ্রে রেখে বিভিন্ন ভাষার একটি আবহাওয়া তৈরি করতে হবে।