ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির সবচেয়ে সহজ উপায়গুলো জানুন
বর্তমান যুগে “ডিপ্রেশন” নামক শব্দটার সাথে ছোটো থেকে বড় সবাই কম বেশি পরিচিত। আমাদের চলতি কথাবার্তার মধ্যে মাঝেমাঝেই এই শব্দটা আমরা ব্যবহার করে থাকি। বাংলায় আমরা একে “বিষণ্ণতা” বলে থাকি। সারা বিশ্বেই ডিপ্রেশন এক মারাত্মক ব্যাধি বলে স্বীকৃত। এই বিষণ্ণতা মানুষকে আস্তে আস্তে অক্ষমতার দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। ছোটো, বড় প্রত্যেকেই কম বেশি স্ট্রেস, বিষণ্ণতায় ভোগে কোনও না কোনও সময়। ডিপ্রেশন এমন একটি মেন্টাল ডিসঅর্ডার, যার কারণে কোনও মানুষের জীবন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেতে পারে।
ডিপ্রেশন কেন হয়?
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যেকোনাে দেশের জনসংখ্যার প্রায় ১০-২০ শতাংশ লােক ডিপ্রেশনে ভুগে থাকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৮-৪৪ বছরের মধ্যে সাধারণত এ মানসিক সমস্যা বেশি হয়। আধুনিক নাগরিক জীবনের চাপে এই রােগটি যে কারাে হতে পারে।
ডিপ্রেশনের আরাে কিছু কারণ নীচে তুলে ধরা হলাে:
- জেনেটিক কারণ: পরিবারের রক্তসম্পর্কে আত্মীয়স্বজনের মধ্যে ডিপ্রেশনের সমস্যা থাকলে এই রােগ হতে পারে।
- বায়ােকেমিক্যাল কারণ: মস্তিস্কের সেরাটোনিন ও নরএড্রানালিন এর ঘাটতি এবং অনিয়ন্ত্রিত কর্টিসল হরমােন বৃদ্ধিকে ডিপ্রেশন সৃষ্টির কারণ হিসেবে মনে করা হয়।
- ব্যক্তিত্ব: উদ্বেগপ্রবণ (কোনাে কিছুকে অত্যন্ত বড় মনে। করা), দুশ্চিন্তাগ্রস্থতা, নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়া-এসব সমস্যা ডিপ্রেশনকে বাড়িয়ে দেয়।
- স্নেহবঞ্চিত ও অবহেলা: পারিবারিক কোন্দলের মধ্যে বড় হয়ে ওঠা, দুঃখ-বঞ্ছনার শিকার হয়েও অনেকে ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে।
ডিপ্রেশন এর লক্ষন:
- আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
- আগে যে সকল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন, সেগুলি আর আপনাকে আকর্ষণ করতে পারবে না।
- সবসময় নিরাশ অনুভব হবে।
- শরীরে অস্বস্তি বা ব্যথা-বেদনা বেড়ে যাবে।
- নিজেকে ভালাে লাগবে না।
- খাওয়াদাওয়ার সময়সূচিতে ফারাক।
- ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাবে।
- মনঃসংযােগে সমস্যা হবে।
- অহেতুক ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করা।
- অল্পতেই রেগে যাওয়া।
- ইচ্ছে করেই প্রচন্ড ব্যস্ত একটি জীবন বেছে নেয়া।
- ভালাে বা খারাপ- এমন অনুভূতি কোনােটাই না থাকা।
- অনুভূতিগুলাে বেশিরভাগ লুকিয়ে রাখা।
ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার উপায়ঃ
১. সঠিক পুষ্টিকর অাহার বা ডায়েট :
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার:
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড আমাদের ব্রেনের সমস্ত ফাংশন কে সঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং ব্রেনের মধ্যে ডিপ্রেশন ডিপ্রেশন থেকে হওয়া ইনফ্লামেশন ও সেলুলার ডেমেজ কে কমায়।
এরকম কিছু খাবার হল আখরোট, আলমন্ড, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, ইত্যাদি।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার:
ডিপ্রেসন বা বিষন্নতার ফলে আমাদের শরীরের মধ্যে দিগুন ফ্রী রাদিক্যালস সৃষ্ঠী হয় যার ফলে ব্রেন ও শরীরের বিভিন্ন ভাগে সেলুলার ড্যামেজ হতে শুরু করে যা খুবই ক্ষতি কারক।
এই ফ্রী রাদিক্যালস এর অধিক উত্পাদন ও শারিরীক ক্ষতিকারক প্রভাব কম করতে সাহায্য করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার।
সহজে পাওয়া প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত রোজ কার খাবার হল কুমড়ো, গাজর, ব্রকলি, পালংশাক, টমেটো, ক্যাপসিকাম, লেবু এবং আঙ্গুর ইত্যাদি।
প্রোটিন যুক্ত খাবার
প্রোটিন মধ্যে থাকে এক প্রকার এমাইনো এসিড যার নাম ট্রিপটোফান, এটি সেরেটোনিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য এবং আমাদের শরীরে এনার্জি বুস্ট করে। যা আমাদের শারিরীক ও মানসিক ভাবে বিকাশে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে।
এরকম প্রোটিন যুক্ত হল দুধ, মাছ, মাংস, ডিম, সমস্ত প্রকার ডাল, সোয়াবিন ইত্যাদি
ভিটামিন ও নিউট্রিয়েন্ট যুক্ত সবুজ শাকসবজি
সবুজ শাকসবজি মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফাইবার এবং বিভিন্ন ভিটামিনের সম্ভার। এছাড়া শাকসবজির মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে শক্তিশালী ইমিউনিটি বুস্টকারি উপাদান ও এন্টি ক্যান্সার গুনাগুন, যা আমাদের সেলুলার ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে এবং শরীরকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
২. মেডিটেশন বা ধ্যান
বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার দ্বারা প্রমানিত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির পরম ঔষধ হল প্রতিদিন সঠিক নিয়মে মেডিটেশন অভ্যাস করা, কারণ মেডিটেশন আমাদের ভয় অস্থিরতা, উদ্বেগ, অস্বাভাবিক চিন্তা উপর মানসিক অস্থিরিতা উপর সহজে নিয়ন্ত্রণ আনতে সাহায্য করে।
এবং মস্তিষ্কের অতিরিক্ত চিন্তা প্রবাহ থেকে শুরু করে শরীরের রক্তচাপ এবং স্ট্রেস হরমোন গুলি সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখে যার ফলে আমরা বিনা কোন ওষুধে কিছু সময়ের মধ্যে ভিতর সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে উঠতে পারি।
মেডিটেশন আমাদের নানান উপকারী গুণ আছে যা মুড কে ব্যালেন্স রাখতে এবং দুশ্চিন্তা ও অবসাদ মত সমস্যা সহজে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।
৩. নিউরো লিঙ্গুইস্টিক প্রোগ্রাম
আসলে এনপিএল হলো এক ধরনের বিশেষ নিউরো থেরাপি যার যা আমাদের মাইন্ড এর বিহেভিয়ার প্যাটার্ন সম্পূর্ণ পরিবর্তণ করা সম্ভব, পুরোনো স্মৃতি সম্পুর্ন মুছে ফেলা বা সম্পুর্ন নতুন ধারনা মনের মধ্যে ইমপ্লান্ট করা সম্ভব। প্রতিদিন বিশেষ টেকনিক ব্যবহার দ্বারা আমরা দুশ্চিন্তা মত সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে পারি। এছাড়াও নিজের আত্মবিশ্বাস কে সুষ্ঠ ভাবে গড়ে তুলতে সক্ষম এবং সহজে বিষন্নতা বা হতাশা কে চিরকালের মত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
তবে এনপিএল টেকনিক কেবল মাত্র এনপিএল এক্সপার্ট দের পরামর্শ নিয়ে করা উচিত, ভুল এনপিএল টেকনিক নিজের জীবনে আরো বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে ।
৪. বাইনারাল বিটস
এটি এক ধরনের বিশেষ মিউজিক ফ্রিকোয়েন্সি যা মানুষের মস্তিষ্ক কে আলফা বিটা কামা মতো বিভিন্ন স্তরে নিয়ে সহজে সক্ষম এই প্রত্যেকটি আমাদের মস্তিষ্কের প্রত্যেকটা স্তর যার দ্বারা আমরা সহজেই নিজেদের ইমোশান চিন্তা ভাবনা ও চেতনার উপর স্থিরতা প্রদানে সক্ষম এই মিউজিক গুলি ডিপ্রেশন বা দুশ্চিন্তার মত সমস্যা সহজে কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
এছাড়াও এই মিউজিক ফ্রিকোয়েন্সি সবচেয়ে বড় গুণ হল এটি ঘুমের সমস্যা দূর করে ও রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনেও সাহায্য করে।
৫. লাফিং থেরাপি
লাফিং থেরাপি অর্থ হাসি, আসলে সমস্ত রোগের ঔষধ বলা হয় হাসি আপনি যত বেশি হাসবেন তত কম রোগ হওয়ার ভয় থাকবে আপনার।
কারণ কিছু বিশেষ পরীক্ষার দ্বারা প্রমানিত হাসি আমাদের ইউনিটি’ বুস্ট করে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায় স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা কমায় এবং ভয় বা উদ্বেগ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। যে কোনো স্টেজের ডিপ্রেশন বা দুশ্চিন্তার ক্ষেত্রে হাসি বা লাফিং থেরাপি সবচেয়ে সহজ ও উপকারী ন্যাচারাল ট্রিটমেন্ট ও কম খরচ সাপেক্ষ।
৬. পার্থনা
মানুষের জীবন প্রতিটা মুহূর্ত খুবই অমূল্য তাই জীবনে কী কী নেই তার হিসাব বন্ধ রেখে আমাদের কাছে যা আছে তাই নিয়ে ভগবান বা পরম ঈশ্বর কে ধন্যবাদ জানানো উচিত।
যাতে জীবনের কাছে হেরে না গিয়ে যতটুকুই সমস্যা থাকুক না কেন তার সাথে লড়াই করার শক্তি পাওয়া যায়। তাই ভারতীয় সংস্কৃতিতে প্রতিটিই মানুষ কে প্রতিদিন পার্থনা করার কথা বলা হয় যার দ্বারা মানুষ জীবনের প্রতি আশাবাদী থাকে যাতে নিজের বিষন্নতা ও দুশ্চিন্তা সমস্যা সাথে সহজে লড়াই করতে পারেন
৭. ঘুম
ঘুম আমাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। আপনার যখন পর্যাপ্ত ঘুম না হয় তখন হতাশার লক্ষণগুলি আরও প্রকট ভাবে দেখা দেয়৷ অপর্যাপ্ত ঘুম বিরক্তি, মেজাজ এবং ক্লান্তি বাড়িয়ে তােলে।
যদি সত্যিই ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে থাকেন কিংবা বের হওয়ার ইচ্ছা থাকে তবে, প্রথমে আপনি প্রতি রাতে পর্যাপ্ত ঘুম পাচ্ছেন তা নিশ্চিত করুন, প্রতি রাতে সাত থেকে নয় ঘন্টা ঘুমানাের চেষ্টা করুন৷