জীবন গল্পজীবনী

আহমদ ছফা কেমন ছিলেন?

প্রথিতযশা বাংলাদেশী চিন্তাবিদ ও লেখক সলিমুল্লাহ খান সহ আরাে অনেকের মতে, মীর মশাররফ হােসেন ও কাজী নজরুল ইসলামের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি মুসলমান লেখক হলেন আহমদ ছফা।

একজন স্পষ্টভাষী এবং রাজনৈতিক সমালােচক হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ও প্রিয় আহমদ ছফা। একাধারে ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রবন্ধকার ও সাহিত্যিক ছিলেন তিনি। সহজ ভাষায় সত্য তুলে ধরাতে গড়ে উঠেছে তার একটি আলাদা পাঠকশ্রেণী। একনিষ্ঠ এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব পাঠক শ্রেণীর মনে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ব্যক্তি হিসেবে আহমদ ছফা কেমন ছিলেন তা কয়েকটি ঘটনার মাধ্যমেই চলুন আসি,

ঘটনা-০১

একদিন হুমায়ুন আহমেদ দাঁড়িয়ে আছেন, দেখলেন আহমদ ছফা রিক্সায় করে যাচ্ছেন, শুকনা মুখ। হুমায়ুন আহমেদ জিজ্ঞেস করলেন, ছফা ভাই কী ব্যাপার?
আহমদ ছফা বললেন, না খেয়ে ঘুরতেছি সারাদিন থেকে!
-কেন?
-ক্ষুধা নিয়ে একটা গল্প লিখবাে। তাই ক্ষুধা অনুভব করার জন্য সকাল থেকে না খেয়ে ঘুরতেছি।
এরপর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে ঘুরলেন,রাত আটটায় অজ্ঞান হয়ে পরে গেলেন রিক্সা থেকে। এই হলাে আহমদ ছফা।..

ঘটনা-০২

একবার ড.আব্দুল হাই আহমদ ছফার নাম পাল্টাতে বলেছিলেন, হুফা তাকে জবাবও দিয়েছিল।
উনি বলছিলেন- ‘ছ’ ‘ট’ চলবে না ‘স’ দন্ত্যস দিয়ে লিখতে হবে।”

দুফা বলেছিলেন- ‘স্যার, আমি সাত বােনের পরে একটা ছেলে, ভাই জন্মাইছি এবং জন্মের পরে আমার
আকিকাতে সাতটা গরু জবাই করা হয়েছে। সুতরাং আপনার অপছন্দের জিনিস বলে এইটা কাটা যাবে না’..

ঘটনা-০৩

আহমদ ছফাকে যেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার দেওয়া হয় সেজন্য তলব করেছিলেন হুমায়ুন আহমেদ। আহমদ ছফা সেই পুরস্কার নেননি, উল্টো হুমায়ূন আহমেদকে বলেছেন- হুমায়ুন, তােমার এত্তবড় সাহস! তুমি আমার জন্য তলব করাে পুরস্কারের..

ঘটনা-০৪

আনিস সাবেতের বােনের বিয়ে কুমিল্লা গিয়েছিলেন আহমদ ছফা। কথা চলাকালিন আনিস সাবেত তার একটি উপন্যাস নিয়ে মন্তব্য করেন যা আহমদ ছফার পছন্দ হয়নি। তিনি কথাটি উইথড্র করার জন্য আনিস সাবেতকে অনুরােধ করেন। অন্যথায় ঢাকায় ফেরার হুমকি দেন। এত রাতে গাড়ি পাবেন না ভেবে আনিস সাবেত কথাটি উইথড্র করলেন না। ফলে হুফা পায়ে হেটেই ঢাকায় রওনা করলেন। পথিমধ্যে তার মাথায় একটি উপন্যাসের প্লট চলে আসে। আর সেটি হলাে ‘ওঙ্কার’।

READ MORE:  বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া ২য় টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহ এর পরামর্শেই বাজিমাত আফিফের

ঘটনা-০৫

হুমায়ূন আহমেদের বাবা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। শহীদ পরিবার হিসেবে সরকার থেকে থাকার জন্য বাড়ি পেয়েছিলেন। কিন্তু একটা মহল সরকারের দেয়া বাড়ি থেকে তাদের উঠিয়ে দিতে চাইলে আহমদ ছফা তার গায়ে কেরােসিন ঢেলে দেন। পরে আগুন লাগিয়ে দেয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন। তার সেই সাহসি কর্মকান্ডের কারণে পরবর্তীতে হুমায়ুন আহমেদ তাদের থাকার জায়গাটি ফেরত পেয়েছিলেন।

 

ঘটনা-০৬

কলকাতার বই যেন বইমেলায় না প্রবেশ করেন সেজন্য আন্দোলন করেছেন ছফা। এজন্য শওকত ওসমান তাকে বাজে লােক বলেছিলেন। পরে ছফা তাকে নীলক্ষেত নিয়ে গিয়ে দোকানদারদের শওকত ওসমানের নাম জিজ্ঞেস করলে কেউ চিনতে পারেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *