রোনালদো কেনো সরিয়ে রাখল কোকের বোতল? কোমল পানীয় কি সত্যিই ক্ষতিকর?
সম্প্রতি রোনালদো কোকা কোলার ২ টি বোতল সরিয়ে সবাইকে সাধারণ পানি পান করতে বলেন। আর এতেই কোকা কোলার ক্ষতি হয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। কোকা কোলা একটি কোমল পানীয়। এখন প্রশ্নটা হলো রোনালদো কি ঠিক বলেছেন? সত্যিই কোমল পানীয়গুলো আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী? কখনও কি আমরা ভেবে দেখেছি? এসব কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস খেয়ে আমরা আমাদের শরীরের ক্ষতি করছি না তো? চলুন উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।
বর্তমানে আমরা পথে ঘাটে, বাসায়, অফিস আদালত, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সর্বত্র পান করে যাচ্ছি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোমল পানীয়। কোমল পানীয় এর পাশাপাশি এখন বাজারে আছে নানা ব্র্যান্ডের এনার্জি ড্রিংকস। কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপনের চাকচিক্যে আকৃষ্ট হয়ে আমরাও হরহামেশা কিনে পান করছি এসব কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকস। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে কোমল পানীয় নিয়ে ভয়াবহ তথ্য। আমাদের শরীরের জন্য এসব কোমল পানীয় আমাদের ধারণাতীত ক্ষতির কারণ। নিজের এবং পরিবারের সুস্থতার জন্য আমাদের এই বিষয়গুলো জানা থাকা প্রয়োজন।
আমরা যদি সাধারণ পানি ৪ ডিগ্রি এর নিচে তাপমাত্রায় ফ্রীজে রেখে দেই তবে তা বরফে পরিণত হয়। অন্যদিকে কোমল পানীয় ফ্রীজে রাখলে এমনটি ঘটে না। আরও নিম্ন তাপমাত্রা প্রয়োজন হয় তখন। কারণ কোমল পানীয় গুলোতে মেশানো হয় ইথিলিন গ্লাইকল নামক এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান যা এন্টি ফ্রিজার হিসেবে কাজ করে। ইথিলিন গ্লাইকল আর্সেনিকের মতো এক প্রকার বিষ। মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, লিভার ও কিডনি বিকল এবং মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয় ইথিলিন গ্লাইকলের কারণে। তবুও কোম্পানিগুলো ইথিলিন গ্লাইকল মিশিয়ে যাচ্ছে কোমল পানীয় গুলোতে। এছাড়াও কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকস গুলোয় মেশানো হয় কৃত্রিম রং। কারমোসিন, ব্রিলিয়ান্ট ব্লু, সালফেট ইয়োলো ইত্যাদি কৃত্রিম রং ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ। কোমল পানীয়তে সোডিয়াম বেনজয়েট প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সোডিয়াম বেনজয়েট মানুষের হাঁপানি ও চর্মরোগের কারণ হতে পারে। এছাড়াও কোমল পানীয়গুলো এসিডিক হয়ে থাকে। অধিকাংশ কোমল পানীয় এর pH মান ২.৫ – ২.৮ এর মধ্যে থাকে। দীর্ঘদিন কোমল পানীয় পানের ফলে এসব এসিড মানুষের শরীরে জমা হয়। ফলে মানুষের হাড় ও দাঁত ক্ষয় হতে থাকে।
আমরা জানি কোমল পানীয় গুলো ঝাঁঝালো হয়ে থাকে। এই ঝাঁঝালো স্বাদ আমাদের অত্যন্ত ভালো লাগে। কিন্তু আমরা জানি না যে এই ঝাঁঝালো স্বাদ আমাদের জীবনের জন্য ডেকে আনছে বিপর্যয়। কোমল পানীয়তে ঝাঁঝালো স্বাদ আনার জন্য ব্যবহার করা হয় ফসফরিক এসিড যা আমাদের শরীরের হাড় ক্ষয় করে। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে কোমল পানীয়তে একটি দাঁত রেখে দিলে ১০ দিন পর তা সম্পূর্ণ গুলিয়ে যায়। তাহলে একবার ভাবুন এসব পানীয় আমাদের শরীরের দাঁত ও হাড়ের জন্য কতটা ক্ষতিকর।
কোমল পানীয় একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করে। কারণ কি জানেন? কোম্পানি গুলো উচ্চ মাত্রার ক্যাফেইন ব্যবহার করে এসব পানীয়তে। যা আমাদের শরীরে আসক্তি ও সাময়িক উত্তেজনা তৈরি করে। এর আসক্তি অনেকটা মাদকের মতোই। ক্যাফেইন আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে কিছুক্ষণের জন্য, কিন্তু এরপরই আমাদের মধ্যে তৈরি হয় অবসন্নতা। দীর্ঘদিন ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে দেখা দেয় অনিদ্রা, ক্যান্সার, মস্তিষ্কের দুর্বলতা। গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভস্থ শিশুদের অনেক ক্ষতি হয় ক্যাফেইনের জন্য। অকাল গর্ভপাত, ওজনহীন ও নানারকম ত্রুটিযুক্ত শিশু জন্ম নেয়। কোমল পানীয় পান করার মাধ্যমে আমাদের শরীরে কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রবেশ করে অথচ এই কার্বন ডাই-অক্সাইড আমরা শরীর থেকে বের করে দেই প্রশ্বাসের সাথে কারণ তা আমাদের জন্য ক্ষতিকর।
কোমল পানীয় এর স্বাদ মিষ্টি করার জন্য ব্যবহার করা হয় গ্লুকোজ, সুক্রোজ,স্যাকারিন ইত্যাদি। এর ফলে এক বোতল কোমল পানীয়তে ক্যালরি থাকে প্রায় ৯ চামচ চিনির সমান। এই পরিমাণ ক্যালরি পোড়াতে ৩ ঘন্টার বেশি ব্যায়াম করা উচিত। কিন্তু তা তো আর হয়ে ওঠে না। ফলস্বরূপ ওজন বেড়ে যায় আমাদের। ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, রক্তনালির সংকোচন ইত্যাদি জটিল রোগ হয়। আর ভোগ করতে হয় অকাল মৃত্যু।
আরো একটি ভুল আমরা করি। তা হলো মেহমান বাড়িতে ভরপেট খাওয়ার পর হজম করার জন্য কোমল পানীয় পান করি। খাবার হজম করার জন্য পাকস্থলিতে সবথেকে উপযোগী তাপমাত্রা হলো ৩৭ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। কিন্তু পেট ভরে খাওয়ার পর আমরা যখন ফ্রিজে থাকা প্রায় ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার কোমল পানীয় পেটে ঢালি তখন সম্পূর্ণ হজমের প্রক্রিয়াটিই নষ্ট হয়ে যায়। ফলস্বরূপ হয় বদহজম।
এছাড়াও ক্ষেত্রবিশেষে কোমল পানীয়তে ব্যবহার করা হয় এলকোহল। বিভিন্ন গবেষণায় তা প্রমাণিত হয়েছে। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষকরা একবার জমিতে কীটনাশক ব্যবহার না করে কোকা কোলা ও পেপসি ব্যবহার করেছিল এবং দেখা গেছে পোকা মাকড় মরে শেষ। পরে গবেষণা করে দেখা গেছে কোমলপানীয়গুলোতে স্বাদ আনার জন্য কীটনাশকের উপাদানও ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও কোমল পানীয়তে রয়েছে নানা ধরনের ক্ষতিকর হাবিজাবি মশলা।
বর্তমান বিশ্বে অকাল মৃত্যু অনেক বেড়ে গেছে এসব কোমল পানীয় এর ফলে; স্বাস্থ্য গবেষকরা সবাই এ বিষয়ে একমত। তাই কোমল পানীয় থেকে দূরে থাকুন। সুস্থ থাকতে প্রাকৃতিক ফলের জুস এবং সাধারণ পানি পান করুন। মনে রাখবেন, সুস্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।