ভালো থাকা
ভালোথাকা নামক শব্দটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। ভালো সবাই থাকতে চাই। পৃথিবীতে ভালো থাকার অনেক উপায় আছে। কোনোটা বা ভালো আবার কোনোটা খারাপ। এমন অনেকে আছেন যারা শুধু ভালো উপায়ে ভালো থাকতে চায়, অনেকে খারাপ উপায়ে, অনেকে ভালো খারাপ সব উপায়ে, আবার অনেক সময় চাওয়া পাওয়া কে উপেক্ষা করেই শুরু হয় ভালো থাকা নামক ছন্দের পিছনে ছোটা। কোনো না কোনো উপায়ে আমরা সবাই ভালো আছি। ভালো সবাই থাকে। বাঁচতে গেলে ভালো থাকতে বা নিজেকে ভালো রাখতেই হবে।
পৃথিবীতে যেখানে যত ভালোবাসা আছে সেখানে ততো কষ্টও আছে কিন্তু মা একমাত্র যার কাছে সন্তানের শুধু ভালোবাসাই থাকে তার থেকে সন্তানকে কখনো কষ্ট পেতে হয় না।
ভালো থাকাতো তাকেই বলে যখন কাওকে ভালো রাখতে পেরে ভালো থাকা হয়, ভালো থাকা সেটা নয় যখন অন্যকে কষ্টে রেখে নিজে ভালো থাকা যায়। আবার কেও কষ্টে আছে না ভালো আছে এসব না দেখে শুধু নিজের টা ভেবেও নিজেকে ভালো রাখা যায়।
পৃথিবীতে সবাই স্বার্থপর না এটাও যেমন সত্যি তেমনি সবাই যে নিজেকে নিয়ে ভাবে বা নিজের ভালো থাকাকেও খুব বেশি গুরুত্ব দেয় এটাও সত্যি। কেও যদি আমার কথা না ভেবে ভালো থাকে কিন্তু আমি তাকে না পেয়ে বা যেকোনো কারণে তাকে ভেবে কষ্ট পাচ্ছি, তখন আমরা তাকে স্বার্থপর বলে থাকি। আসলে প্রকৃত অর্থে সে স্বার্থপর না। সে যদি আমায় কষ্ট দিয়ে নিজে ভালো থাকে তখন আমরা তাকে স্বার্থপর বলতে পারি।
এ জগতে কারো উপর আসলে কারো অধিকার থাকে না। যে যাকে যতোটা ভালোবাসে সে তার থেকে ততোটা অধিকার অর্জন করে, কিন্তু সেটা এক পাক্ষিক ভালোবাসার ক্ষেত্রে না। দু দিক থেকে যখন ভালোবাসাটা হয় তখন অধিকার শব্দটা গভীরভাবে জড়িয়ে পরে। আর তখনই ভালো থাকার প্রশ্নটা আসে।
পৃথিবীতে মানুষ ভালো থাকতে অনবরত ছুটছে। সবাই কি ভালো থাকতে পারছে?
হা পারছে কেও হয়তো অনেক বেশি ভালো আছে কেওবা একটু কম। ভালো সবাই আছে। নিজেকে ভালো রাখতে গিয়ে আমরা অনেক সময় এমন পথও অবলম্বন করি যেখানে অন্যের ক্ষতিটা বেশি হয়। তবুও কি সেটার পিছনে ছুটে চলা বাদ দিয়েছি?
হা কেও বা বাদ দিয়েছে আবার কেও সেটার পিছনে ছুটছেই। কেও সেটা বাদ দিয়ে সুখি আছে, খুশি আছে, কেও বা সেটার পিছনে ছুটে খুশি আছে। দু দল এর মানুষই ভালো আছেন তবে ভিন্ন উপায়ে। সেটার পিছনে ছুটা অবস্থাই আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে এই পথ অবলম্বন না করলে বা এই পথে না হাটলেও ভালো থাকা যাবে যার কারনে আমরা ওই পথেই চলতে থাকি আর পরে অধঃপতন এর স্বীকার হই। এই অধঃপতন টা কারো জীবনে ক্ষণিকের, আবার কারও জীবনে একটা লম্বা সময় ধরে বিরাজ করে। কেও বা সেটা কখনো কাটিয়েই উঠতে পারে না।
কিন্তু যে এই ভুল পথে ছোটা থেকে আগেই বিরত হয়েছিলো সেও ভালো আছে। আর যে কাটিয়ে উঠতে পারে নি সেও ভালো আছে কিন্তু দুজনার ভালো থাকার মধ্যে রাত দিন তফাৎ রয়ে গেছে।
সময়ের ব্যবধানে নিয়তি কে সামনে রেখে আমরা সবাই স্বার্থপর। আর সবাই স্বার্থপর হচ্ছি তার একটাই কারণ ভালোথাকা। ভালো থাকতে গিয়ে ভালো রাখতে গিয়ে আমরা কখনো কখনো হারিয়ে ফেলছি নিজের সত্তা, বিসর্জন দিচ্ছি নিজের মানবতা। প্রতিদিন সকালে উঠে একটা ঝুড়ি নিয়ে পথ চলা শুরু হয়। শুধু ভালো থাকবো যে ফলগুলো কুড়িয়ে সেগুলাই কুড়াতে থাকি আর ঝুড়ি ভরতি করি। দিন শেষে যদি হিসাব মিলাতে যাই, তাহলে কি দিন শেষে সত্যিই ভালো থাকবো?
হা ভালো থাকবে কিন্তু সবাই না।
ভালো থাকাটা আসলেই তার চাহিদার উপরও নির্ভর করে। ভালো কাজের মধ্য দিয়ে যদি কেও ভালো থাকতে পারে তবে সে আসলেই ভালো থাকবে। তার চাহিদাটা ঠিক। কিন্তু সব ভালোর মাঝে যে ভালো থাকতে পারে না, ভালো থাকার জন্য যাকে খারাপ পথও অবলম্বন করতে হয়, প্রকৃত পক্ষে সে ক্ষণিকের ভালো থাকাটায় উপভোগ করে আর ভাবে এইতো স্বর্গ পেয়েছি।
তার ভালো থাকাটা আসলেই কিছু সময়ের ভ্রম মাত্র।
কোনো একটা খারাপ পরিস্থিতিকে কেও বা খুব সহজেই মোকাবেলা করতে পারে আবার কেও বা অনেক বেশি সময় নেয়, কেওবা সেটাকে মোকাবেলা করতে না পেরে অনেক সময় নিজের পরিসমাপ্তি ঘটায়। যারা খারাপ পরিস্থিতি টাকে খুব সহজেই সাধারণ ভাবে নিতে পারে, খুব সহজেই সেটাকে বাস্তবতা বলে মেনে নিয়ে কাটিয়ে উঠতে পারে তারা প্রকৃত পক্ষেই ভালো থাকে। আবার এমন অনেকে আছেন যারা এই খারাপ পরিস্থিতিকে সহজে সাধারণ ভাবে নিতে পারে না, পারে না মেনে নিতে সেটাকে বাস্তবতা বলে তারা আসলেই ভুগতে থাকে। ধুকে ধুকে শেষ এর দিকে গিয়ে পৌঁছায়। যদি কেও বা অনেকটা সময় নিয়েও সেটাকে কাটিয়ে উঠতে পারে তবে তার জীবনে আলোর পথের সন্ধান পাওয়া যায়। শেষ থেকে তার জীবনটা আবার নতুন সাজসজ্জায়, ভিন্ন এক রুপ নিয়ে আলোর মসাল জ্বালিয়ে শুরু হয় ভালোথাকা। কিন্তু এটাও ঠিক যে জীবনের অনেকটা সময় সে নিজের সাথে, পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধ করে কাটিয়ে দিয়েছে। আবার কোনো খারাপ পরিস্থিতি তার জীবনে আসবে না এমনতো না। কিন্তু এবার তাকে আর আগের মতো এতোটা ধুকতে হবে না। কিন্তু এমন মানুষ ও আছেন যারা বার বারই একই রকম ভাবে বিপদের সম্মুখ প্রান্তে দাড়িয়ে যান কিন্তু সহজেই বিপদ কাটিয়ে তীরে ফিরতে পারেন না তাদের জীবনের নৌকা থাকে কিন্তু ভালো পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে তীরে ফেরার জন্য বৈঠা থাকে না। তারা কোনো পরিস্থিতিতেই ভালোথাকার পথের সন্ধান পান না।
পৃথিবীতে এতো মানুষের ভীড়ে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা নিজের দুঃখটা অন্য কে বলে ভালো থাকেন, নিজেকে হালকা মনে করেন, একটু সুখ পান। আবার এমন অনেকে আছেন যারা নিজের কষ্টটা নিজের মনের মধ্যে চেপে রাখেন অন্যকে না বলে এবং এমন ও ভাবেন যে নিজের কষ্টটা অন্যকে বলে অন্যের কষ্টটা বাড়ানোতে কোনো মাহাত্ম্য নেই। আবার এমনও মানুষ আছেন যারা কিনা প্রকৃত পক্ষে নিজের কষ্টটা অন্যকে বলতেই পারেন না। না পারেন নিজে সইতে না পারেন কাওকে বলে নিজের কষ্টটা অন্যের সাথে ভাগাভাগি করতে।
আসলে তিন শ্রেণির মানুষই ভালো থাকেন। কিন্তু কেও বা অনেক বেশি ভালো থাকেন, কেও বা একটু কম, আবার কেও একেবারেই কম।
সব থেকে বড় ব্যাপার এটাই যে, কখনো আমরা কারো কাছ থেকে এই জিনিসটা পাবো বা এসময়ে আমরা এ কাজ টা করে ভালো থাকবো এমন আশা রাখা উচিত নয় তাহলে কোনো কারণে যদি আমরা সেই জিনিসটা না পাই বা সেই কাজটা সম্পুর্ণ করতে সক্ষম না হই তখন ভালো তো থাকবোই না আরও বেশি কষ্টে জড়িয়ে পড়বো। যেমন, কখনো যদি আমরা ভাবি যে এতো কষ্ট করে একটা ঘুড়ি বানালাম, বিকেলে খুব মজা করে উড়াবো বিকেলটা খুব ভালো কাটাবো কিন্তু দেখা গেলো বৃষ্টি নেমে এলো বা বাতাস নেই অথবা ঘুড়িটা ভেঙ্গে গেলো, যার কারনে আমরা ঘুড়িটা উড়াতে সক্ষম হলাম না। তখন খুব বেশি কষ্ট হবে, বিকেল টাতে ভালো থাকা টা হলো না ভেবে। তাই বলে কি আমরা থেমে যাবো?
যদি থেমে যাই তাহলে ভালোথাকার বাপারটা তখন শুধু ধোয়াশা মনে হবে। তাই বলে পরিকল্পনা ছাড়া কাজ করতে হবে এমন না, শুধু মাত্র ফল ভোগের আশা টা রাখা উচিত নয়।
তাই কর্ম করে যেতে হবে। সেই কর্মের ফল দেওয়ার জন্য তো তিনি আছেন।
কোনো একটা সম্পর্ক ভালো ভাবে টিকে থাকতে, টিকিয়ে রাখতে হলে উভয় দিকের গুরুত্বই সমান এবং অধিক থাকা জরুরি। একটা সম্পর্কে আমরা যদি বুঝতে পারি যে আমরা যাদেরকে অনেক বেশি কাছের, অনেক বেশি প্রিয় মনে করি কিন্তু তাদের কাছে আমাদের গুরুত্বটা নেহাতই উপেক্ষা মাত্র, তখন থেকেই সময়ের সাথে সাথে ভালো থাকার, ভালো থাকার সম্পর্কটার , ইতি টানতে শুরু করে সময়ই। সেই সম্পর্কটা বয়ে নিয়ে ভালোথাকাটা তখন দুর্বিষহ হয়ে দাড়ায়। যদি কখনো তারা সম্পর্কটার গুরুত্ব উপলব্ধি করে এবং উভয় দিকের চাওয়াই সম্পর্কটা আবার আগের ন্যায় স্বভাবিক হয় তাহলেই আবার সেই সম্পর্কটা বয়ে নিয়ে ভালোভাবে, ভালোবাসাই ভালোথাকা যাবে।
একইভাবে তাদের ক্ষেত্রেও এই ঘটনাটাই ঘটবে যদি সম্পর্কটায় তাদের গুরুত্বটা আমাদের কাছে কমতে থাকে।
জীবনে চলার পথে অনেকেই ঘনিষ্ঠতায় জরিয়ে যায় আমাদের জীবনের সাথে। তবে সবাই যে আমাদেরকে সমান ভাবে গুরুত্ব দিবে বা আমরাই যে সবাইকে সমান চোখে দেখি বা দেখবো এমন টাও না। এখানে আমাদেরকে বোঝা উচিত যে কোন মানুষগুলো আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য সময় বের করেন, আর কোন মানুষগুলা সময় পেলে আমাদেরকে সময় দেন, তাহলেই হয়তো চলার পথটা আর ভালো এবং ভালো থাকাটাও আরও সহজ হয়ে যাবে।
লেখক
বিশ্বজিৎ ঘোষ
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়