জেনে নিন কোন কোন ফোবিয়া আপনার রয়েছে?
ফোবিয়া কিঃ
উপযুক্ত কোন কারণ না থাকলেও কোন প্রাণী বা বস্তুর অথবা কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে কেউ কেউ অযৌক্তিক ধরনের ভয় পেতে পারে। এ অযৌক্তিক ধরনের ভয়কে ফোবিয়া বলে।
ভয় ও ফোবিয়ার মধ্যে পার্থক্যঃ
বর্তমানে অনেকেই আমার ফোবিয়া আছে এই বলে অন্যের সিম্প্যাথি পাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ভয় ও ফোবিয়া এক জিনিস নয়। ফোবিয়া হলো ভয়ের চূড়ান্ত অবস্থা। ফোবিয়া থাকলে ব্যাক্তি নির্দিষ্ট বস্তু, প্রাণী বা পরিস্থিতিকে সবসময় এড়িয়ে যাবেন। যদি ঐ বস্তু, প্রাণী বা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েই যান তাহলে ব্যক্তি অত্যধিক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, শরীরের বিভিন্ন পেশি শক্ত হয়ে যায়, হার্টবিট অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়, শরীরে প্রচুর ঘাম হতে থাকে। মোটকথা ব্যক্তির স্বাভাবিক আচরণের অবস্থায় থাকে না।
আর ভয় এর ক্ষেত্রে ব্যক্তির অবস্থা এতটা গুরুত্ব হয় না। কিছুটা আতঙ্কিত হলেও স্বাভাবিক বিচার-বিবেচনা দ্বারা পরিস্থিতি সামলে উঠতে পারে ভয় পাওয়া ব্যক্তি। ফোবিয়ার ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়ে উঠে না।
ফোবিয়া কেন হয়ঃ
- বংশগত কারণে ফোবিয়া হতে পারে। তবে বাবা-মার এক ধরনের ফোবিয়া ও সন্তানের অন্য ধরনের ফোবিয়া থাকতে পারে।
- বয়সের কারণে বিভিন্ন ধরনের ফোবিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে বয়স বেশি হলে শারীরিক অক্ষমতার জন্য পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। সেখান থেকেও ফোবিয়া হতে পারে।
- আবার জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ের কোনো বাজে অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে ফোবিয়াতে রুপান্তরিত হতে পারে।
ফোবিয়া কত প্রকারঃ
৪০০ রকমের ফোবিয়া আছে বলে জানা যায়। এবার আমরা জানবো উল্লেখযোগ্য সব ফোবিয়ার নাম।
- অ্যাক্লুফোবিয়া ( অন্ধকার ভীতি)
- অ্যারোফোবিয়া ( উড়ার ভীতি। যেমন বিমানে চড়া)
- একোস্টিকোফোবিয়া ( শব্দ ভীতি)
- অ্যাক্রফোবিয়া ( উচ্চতা ভীতি)
- অ্যাগ্রোফোবিয়া ( রাস্তা পার হতে যে ভয়)
- আইচমোফোবিয়া ( ধারাল বস্তুর ভয়)
- অ্যাকোয়াফোবিয়া ( পানি ভীতি)
- অ্যাফেনফোস্ফফোবিয়া ( স্পর্শ ভীতি)
- এন্ড্রোফোবিয়া ( পুরুষে ভয়)
- অ্যানক্রাফোবিয়া ( বাতাস ভীতি)
- অ্যালগোফোবিয়া ( ব্যাথা বা আঘাতের ভয়)
- আইলুরোফোবিয়া ( বিড়াল দেখলে ভয় পাওয়া)
- আরাকনোফোবিয়া ( মাকড়সাভীতি)
- অ্যাস্ট্রোফোবিয়া ( বজ্রপাতে ভয়)
- ব্যাকটিরিওফোবিয়া ( ব্যাকটেরিয়াতে ভয়)
- বাতরাচোফোবিয়া ( উভচর প্রাণী দেখলে ভয় পাওয়া। যেমনঃ ব্যাঙ দেখলে ভয় পাওয়া)
- বাসিফোবিয়া ( পড়ে যাওয়ার ভিডিও)
- বিবলিওফবিয়া ( বইয়ের ভয়)
- ক্যাকোফোবিয়া ( কুৎসিত জিনিসে ভয়)
- কেমোফোবিয়া ( রাসায়নিক বস্তু তে ভয়)
- কেটোপট্রোফোবিয়া ( আয়না দেখলে ভয় পাওয়া)
- কার্সিনোফোবিয়া ( ক্যান্সার ভীতি)
- চিরোপোফোবিয়া ( বাদুড় দেখলে ভয় পাওয়া)
- চেরোফোবিয়া ( অন্যরা যে সব বিষয় গুলোতে সুখ অনুভব করে সেসব বিষয়ে ভয়)
- ক্রমোফোবিয়া ( রং দেখলে ভয় পাওয়া )
- ক্রোনাফোবিয়া ( সময় চলে যাওয়ার ভয়)
- ক্রোনোমেট্রোফোবিয়া ( ঘড়ি দেখলে ভয় পাওয়া)
- ক্লাসট্রোফোবিয়া ( কোথাও আবদ্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়)
- কোইমেট্রোফোবিয়া ( গোরস্থানে ভয়)
- কোপ্রোফোবিয়া ( মলমূত্রের ভয়)
- সাইবারফোবিয়া (কম্পিউটারের ভয়)
- সাইনোফোবিয়া (কুকুর দেখলে ভয় পাওয়া)
- ড্যামোনোফোবিয়া (ভূতের ভয়)
- ডেনড্রোফোবিয়া ( গাছ দেখলে ভয় পাওয়া)
- ডেন্টোফোবিয়া ( দাঁত সংক্রান্ত বিষয়ে ভয়)
- ডোমাটোফোবিয়া ( বাড়ির ভয়)
- ইকোফোবিয়া ( পরিবেশের পরিবর্তনে ভয়)
- আইসোপট্রোফোবিয়া ( আয়নাতে কারো চেহারা দেখতে ভয় পাওয়া)
- এমেটোফোবিয়া ( বমির ভয়)
- এনোক্লোফোবিয়া ( ভিড়ের ভয়)
- এফিবিফোবিয়া ( যৌবন ভীতি)
- ইকুইনোফোবিয়া ( ঘোড়া দেখলে ভয় পাওয়া)
- ইলুইরোফোবিয়া ( বিড়াল দেখলে ভয় পাওয়া)
- এন্টোমোফোবিয়া ( পোকা দেখলে ভয় পাওয়া)
- গেমোফোবিয়া ( বিয়ের ভয়)
- গেনুফোবিয়া ( হাটু দেখলে ভয় পাওয়া)
- গ্লোসোফোবিয়া ( জনগণের সঙ্গে কথা বলতে পাওয়া)
- গাইনোফোবিয়া ( মেয়ে দেখলে ভয় পাওয়া)
- হ্যাফেফোবিয়া ( স্পর্শের ভয়)
- হেলিফোবিয়া ( সূর্যের ভয়)
- হেমোফোবিয়া (রক্ত দেখলে ভয় পাওয়া)
- হারপিটোফোবিয়া ( সরীসৃপ যেকোনো প্রাণী দেখলে ভয় পাওয়া)
- হিপপোপোটোমোনসট্রোসেসকুইপেডালিওফোবিয়া ( লম্বা শব্দ দেখলে ভয় পাওয়া)
- হাইড্রোফোবিয়া ( পানির ভয়)
- হাইপোচন্ড্রিয়া (অসুস্থতার ভয়)
- ইয়াট্রোফোবিয়া (ডাক্তারের ভয়)
- ইনসেক্টোফোবিয়া ( পোকামাকড়ে ভয়)
- কওমপওনোফোবিয়া ( বোতাম দেখলে ভয় পাওয়া)
- লিওকোফোবিয়া (সাদা রং দেখলে ভয় পাওয়া)
- রিলাপ্সোফোবিয়া ( মারাত্মক ঝড়ের ভয়)
- লকিওফোবিয়া ( বাচ্চা জন্মদানের ভয়)
- মেগেইরোকোফোবিয়া ( রান্নায় ভয়)
- ম্যাগালোপোফোবিয়া ( বড় জিনিসে ভয়)
- মেলানোফোবিয়া ( কালো রং দেখলে ভয় পাওয়া)
- মাইক্রোফোবিয়া ( ছোট জিনিস দেখলে ভয় পাওয়া)
- মাইসোফোবিয়া ( ময়লা আবর্জনা দেখলে ভয় পাওয়া)
- ন্যাক্রোফোবিয়া ( মৃত্যু বা মৃত্যু সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে ভয়)
- নোকটোফোবিয়া ( রাতের ভয়)
- অবেসোফোবিয়া ( ওজন বাড়ার ভয়)
- অম্ব্রোফোবিয়া ( বৃষ্টির ভয়)
- অফিডিওফোবিয়া ( সাপ দেখলে ভয় পাওয়া)
- অর্নিথফোবিয়া ( পাখি দেখলে ভয় পাওয়া)
- প্যাপিরোফোবিয়া ( কাগজে ভয়)
- প্যাথোফোবিয়া ( রোগে ভয়)
- পেডোফোবিয়া ( শিশু দেখলে ভয় পাওয়া)
- ফিলেমেটোফোবিয়া ( চুমুতে ভয়)
- ফিলোফোবিয়া ( ভালবাসায় ভয়)
- ফোবোফোবিয়া ( ফোবিয়াতে ভয়)
- পোডোফোবিয়া ( পা দেখলে ভয় পাওয়া)
- পরফিরোফোবিয়া ( গোলাপি রং দেখলে ভয় পাওয়া)
- পাইরোফোবিয়া ( আগুনে ভয়)
- স্কোলিওনিফোবিয়া ( স্কুলে ভয়)
- সেলেনোফোবিয়া ( চাঁদ দেখলে ভয় পাওয়া)
- সমনিফোবিয়া ( ঘুমাতে ভয়)
- টেকোফোবিয়া ( দ্রুততায় ভয়)
- টেকনোফোবিয়া ( প্রযুক্তির ভয়)
- টোনিট্রোফোবিয়া ( মেঘের ভয়)
- ট্রাইপেনোফোবিয়া ( ইনজেকশনে ভয়)
- ট্রাইফোবিয়া ( গর্ত দেখলে ভয় পাওয়া)
- ভেনাসট্র্যাফোবিয়া ( সুন্দরী মহিলা দেখলে ভয় পাওয়া)
- ভারমিনোফোবিয়া ( আবর্জনা দেখলে ভয় পাওয়া)
- জেনোফোবিয়া ( বিদেশি দেখলে ভয় পাওয়া)
- জুফোবিয়া ( প্রাণী দেখলে ভয় পাওয়া)
ফোবিয়া কি ভাল হয়ঃ
যেহেতু অযৌক্তিক ধরনের ভয় থেকে ফোবিয়ার সৃষ্টি তাই ব্যক্তির সামনে যৌক্তিকতা দাঁড় করিয়ে ফোবিয়া ভালো করা সম্ভব। বায়োলজিক্যাল ও নন বায়োলজিক্যাল উভয় পদ্ধতিতেই চিকিৎসা করা হয়।
ফোবিয়া থেকে মুক্তির উপায়ঃ
ফোবিয়ার জন্য সহনশীল ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিহীন চিকিৎসাপদ্ধতি হচ্ছে নন বায়োলজিক্যাল চিকিৎসা। এক্ষেত্রে ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি যে পরিস্থিতিতে ভয় পান তাকে ওই পরিস্থিতিতে ফেলা হয়ে থাকে। তবে তা সহনশীল উপায়ে। প্রথমে শক্ত হয়ে যাওয়া পেশী শিথিল করার ব্যবস্থা করা হয় বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে। এতে করে রোগীর পেশী সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়। তারপর আস্তে আস্তে রোগীর ভয় পাওয়া পরিস্থিতির মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। ধীরে ধীরে উক্ত পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত হয়ে যান তিনি।
বায়োলজিক্যাল পদ্ধতিতে কয়েক ধরনের ট্যাবলেট দেন চিকিৎসকরা। যেমনঃ অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট, সেডেটিভস।
ধন্যবাদ আবরা হোসেন, ফোবিয়া সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপুর্ণ তথ্যে উপস্থাপন করার জন্য।