প্রতিদিন ডিম খাওয়া কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?
প্রতিদিন ডিম খাওয়া কি ঠিক?
ডিমের উপকারিতা অনেক। ডিম আমরা প্রায়ই খেয়ে থাকি। কিন্তু ডিম খাওয়ার ব্যাপারে অনেকেই ভাবে অতিরিক্ত ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ডিম খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে, কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে ইত্যাদি নানা রকম ভয় মানুষের মাঝে কাজ করে। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ডিম খাওয়া নিয়ে আরও বেশি ভয় করে। প্রকৃতপক্ষে ডিম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী বা অপকারী? চলুন বিষয়টি জেনে আসার চেষ্টা করি।
ডিম নিয়ে করা সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা আমাদের এতদিনের ধারণা পাল্টে দিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা হতে একথা প্রমাণিত হয় ডিম কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণ নয়। বরং ডিম হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী। ডিমে রয়েছে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বা অসম্পৃক্ত চর্বি। ডিমে রয়েছে ভিটামিন বি এবং নানা ধরণের পুষ্টি উপাদান। নিয়মিত ডিম খেলে চোখ ভালো থাকে।
১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করে ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ। এতে দেখা যায় সুস্থ ব্যক্তি যাদের শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ স্বাভাবিক রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন একটি করে ডিম খায় তবে কোনো সমস্যা হয় না। হৃদপিণ্ডেরও কোনো ক্ষতি হয় না। ২০০৬ সালে জার্নাল অব নিউট্রিশন থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় , কোনো ব্যক্তি যদি টানা ১২ সপ্তাহ ডিম খায় তবে তার চোখের ম্যাক্যুলার পিগমেন্ট বৃদ্ধি পায় যা তার চোখকে সূর্যের রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। ডিমের মধ্যে যে হলুদ অংশ রয়েছে অর্থাৎ কুসুম সেটিতে রয়েছে কোলিন নামে এক উপাদান। কোলিন গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিম ক্যান্সার ও উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ডিম শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে বাড়িয়ে দেয়। ডিম অক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে। প্রতিদিন ডিম খাওয়া কি ঠিক
খাবার থেকে প্রতিদিন কোলেস্টেরল গ্রহণের সীমা হচ্ছে ৩০০ মিগ্রা। কিন্তু ডায়বেটিস, করোনারি হৃদরোগ, ধূমপানের অভ্যাস ইত্যাদি থাকলে দৈনিক কোলেস্টেরল গ্রহণের স্বাভাবিক সীমা ২০০ মিগ্রা। আর একটি ডিমে কোলেস্টেরল থাকে ১৮৬ মিগ্রা, তবুও এটি থাকে ডিমের হলুদ অংশে। সুতরাং প্রতিদিন একটি ডিম খেলে কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ডিমের সাদা অংশ হলো সম্পূর্ণ প্রোটিন দ্বারা তৈরি। ডিমের হলুদ অংশ যে কেবল কোলেস্টেরল দ্বারা তৈরি তা কিন্তু নয়, ডিমের হলুদ অংশে রয়েছে আরও নানা রকম পুষ্টিকর উপাদান। এগুলোর মধ্যে অন্যতম বিটা- ক্যারোটিনের গুণাবলি সমৃদ্ধ ল্যুটিন ও জিয়াক্সানথিন। এই পুষ্টি উপাদান গুলো চোখের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। মানুষ বার্ধক্যে উপনীত হলে একটি চক্ষুরোগ হয়ে থাকে যার নাম ম্যাক্যুলার ডিজওর্ডার। এই ম্যাক্যুলার ডিজওর্ডার প্রতিরোধে বিশেষ অবদান রাখে লুটিন ও জিয়াক্সানথিন যা ডিমের হলুদ অংশে বিদ্যমান। তবে ডিমের হলুদ অংশ কোলেস্টেরলের চাহিদা সবথেকে বেশি পূরণ করে। প্রতিদিন ডিম খাওয়া কি ঠিক
অনেকেই আছেন ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে ডিম এড়িয়ে চলেন কিন্তু পেসট্রি, ক্রিম, পনির ইত্যাদি খাবার ঠিকই খায়। অথচ এসব খাবার স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বিতে ভরা। ডিমে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ অনেক কম। সম্পৃক্ত চর্বি মেদ বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ডিমে অসম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি যা শরীরের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
প্রোটিন আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় যে ৬ টি উপাদান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম। প্রোটিন দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আর ডিমের সাদা অংশ সম্পূর্ণই প্রোটিন। একটি ডিমে প্রায় ছয় গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। অর্থাৎ আমাদের শরীরে প্রোটিনের চাহিদা মিটানোর জন্যও ডিম অপরিহার্য একটি খাদ্য। ডিম খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের দেহের প্রোটিনের চাহিদা অনেকটুকু পূরণ করতে পারি। ডিমের হলুদ অংশে রয়েছে জিংক। এই জিংক আমাদের শরীরের নানারকম রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। ডিম ভিটামিন ডি এরও একটি অন্যতম বড় উৎস। ভিটামিন ডি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ভিটামিন ডি এর অভাব হলে মানুষ বিষন্নতায় ভুগে কোনো কারণ ছাড়াই। ভিটামিন ডি আমাদের দেহের হাড়ের গঠন করতে সাহায্য করে। ডিমে রয়েছে ভিটামিন ডি এর পর্যাপ্ত উপস্থিতি। শুধু ভিটামিন ডি নয়, ভিটামিন ই রয়েছে ডিমের হলুদ অংশে যা মানুষের চুল পড়া প্রতিরোধ করে। বর্তমানে অনেকেই চুলপড়া সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন, তাদের জন্য প্রতিদিন ডিম খাওয়া বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে। এছাড়াও ডিমে রয়েছে আয়রন। আমাদের শরীরের জন্য আয়রনও অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। আয়রন আমাদের দেহের রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে, শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। শুধু তাই নয়, আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে আয়রন। ডিম খেলে শরীরে আয়রনের চাহিদা পূরণ হয়। প্রতিদিন ডিম খাওয়া কি ঠিক
ডিমে রয়েছে আরও একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যার নাম ফসফরাস। ফসফরাস আমাদের দেহের কোষের বৃদ্ধি এবং বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আমরা যে খাবার খাই তা বিপাকে অর্থাৎ খাদ্য ভেঙ্গে দেহের কোষের শোষণ উপযোগী সরল খাদ্যে পরিণত করতে প্রয়োজন হয় ফসফরাসের। এই ফসফরাস এর উপস্থিতি রয়েছে ডিমে।
ডিমে রয়েছে আয়োডিন। আয়োডিন আরও একটি পুষ্টি উপাদান যা দেহে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন করে। থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি দেখা দিলে ওজন কমে যায়। চুল পড়ে যায়। মানসিক অবসন্নতা সৃষ্টি হয়। তাই শরীরে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন করার জন্য আমাদের প্রয়োজন আয়োডিন যা ডিমের মধ্যে বিদ্যমান থাকে।
ডিমে আছে সোডিয়াম। সোডিয়াম আমাদের দেহের ভিতর তরল ও রক্তচাপের ভারসাম্য বজায় রাখতে কাজ করে। শরীরে সোডিয়ামের অভাব হলে মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ডিম খেলে শরীরে সোডিয়ামের অভাব পূরণ হয়। প্রতিদিন ডিম খাওয়া কি ঠিক
ডিম খেলে শরীরে পটাসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়। পটাসিয়াম আমাদের কোষের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখে, দেহে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে।
তবে ডিম কখনও বাটার ওয়েল, মাখন বা অতিরিক্ত তেলে ভেজে খাওয়া উচিত নয়। কারণ মাখন, তেল এসবে প্রচুর পরিমাণে সম্পৃক্ত ফ্যাট থাকে যা আমাদের দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা আমাদের দেহে নানারকম জটিল রোগ সৃষ্টি করে। ডিম সিদ্ধ করে খাওয়া শরীরের জন্য সবথেকে উপকারী।
ডিম সংরক্ষণের ব্যাপারেও মনোযোগী হওয়া উচিত। ডিম ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে।