সাদা শার্ট আর খাকি প্যান্টে আমি একজন সৈনিক – ৩

Rangpur zilla aschool

 

পর্ব – ৩

স্বপ্নের স্কুল জিলা স্কুলে চান্স পেলাম। খুব খুশি লাগতেছে যেন দুনিয়ার মধ্যে আমি একা সুখী মানুষ এমন বোধ হচ্ছিল। দিন গুনছি কবে স্কুল যাব। পরে এলো সেই দিন। স্কুল যাব মায়ের সকাল বেলা অফিস তাই মা যেতে পারলেন না। বড় ভাইরা ছিলেন তাদের সাথে গেলাম। ড্রেস বানাইতে দিয়েছি এখনো শেষ না হওয়ায় সিভিল ড্রেস পরেই গেলাম সব থেকে ভালো সুন্দর শার্ট, প্যান্ট। একটা খাতা আর কলম নিয়ে গেলাম। নতুন একটি ব্যাগ কিনছিলাম। তখনকার সময়ে সরকার থেকে বিনামূল্যে বই দিত না। দোকান থেকে কিনা লাগতো বা আগের বছরের ভাই আপুদের কাছ থেকে নেয়া লাগত। তো আমি তখনও পাই নাই। পরে জানতে পারলাম সিনিয়র ভাইদের বই স্কুলে জমা দেওয়া লাগে। পরে স্কুল থেকেই ৩য় শ্রেণির বই পেলাম। তো প্রথম দিন স্কুলে গেলাম। ৩য় শ্রেণির রুম ছিলো ১০৩ নাম্বার। যেটা সব থেকে বড় রুম ছিলো। এক সাথে ৮০/৯০ জনের ক্লাস করা যেতো। পরে ক্লাসের মাঝ দিকে একটি ব্রাঞ্চে ব্যাগ রাখলাম আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। অনেক নতুন নতুন বন্ধু। এক দুই যারা আগে থেকে পরিচিত ছিলো তারাই শুধু একে অপরের সাথে কথা বলতেছে আর বেশির ভাগ ছেলেটাই কেমন যেন ভয় ভয় চোখে ছিলো। অনেকের মা বাবা সাথে আসছে। তারা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। পরে হঠাৎ বেল বাজলো। বুখলাম না কেন বাজলো। দেখলাম সবাই দৌড়ে মাঠে যাচ্ছে। পিটি হবে। আমার এলাকার থেকে ৫ জন চান্স পেয়েছিললাম তার মধ্যে ৪ জন প্রভাতী শাখায় আর একজন দিবা শাখায় যে কিনা কোচিং এ পড়ার সময়ের ভালো বন্ধু ছিলো। সেই আমার থেকে আলাদা হয়ে গেল। তবুও মেনে নিলাম অন্য ৩ জনের সাথে পিটিতে দাঁড়ালাম। সব  শ্রেণিরা ছাত্ররা সাদা শার্ট,খাকি প্যান্ট আর শুধু ৩য় শ্রেণি অন্যান্য ড্রেসে। প্রথম প্রথম পিটিতে, কি বলা লাগে কি হয় তেমন জানি না। নতুন অনেক কিছুই শিখতেছি দিন দিন। আস্তে আস্তে ১/২ জনের সাথে কথা হচ্ছে,বন্ধু হচ্ছে। ৩য় দিন পিটিতে দাঁড়ালাম। পিটি শেষ হবার পর আমাদের যাদের নির্ধারিত ড্রেস নেই তাদের আর শেষ বারের মতো ৩ দিনের সময় দিলো। এর পর ড্রেস ছাড়া আসলে স্কুলে ডুকতে দিবে না। আমার ড্রেস আমি বেধে দেওয়া সময়ের ২ দিনের মধ্যেই পেলাম। 

 

নতুন পোশাকের ঘ্রাণ নিলাম। বাসায় এনেই নিজে তাড়াতাড়ি পরলাম। তখন যদি মোবাইল থাকতো হইতো অনেক ছবি তুলতে পারতাম। যা এখন  মাঝে মাঝে দেখলে হইত ভালোই লাগত। তো পরের দিন নতুন ড্রেস, নতুন সাদা জুতা পড়ে স্কুলে গেলাম। সেইদিনটি সব দিন থেকে একটু অন্যরকম লাগছিলো। সব নতুন হওয়ায় একটু বেশিই খুশি লাগতেছিলো। কিন্তু কে জানতো এই খুশি একটু পরই মাটি হবে। পিটি শেষে এক সারি করে সবাই ক্লাস রুমে আসলাম। আমাদের ক্লাস টিচার ছিলেন সবার প্রিয় মোজাম্মেল স্যার। অত্যন্ত ভালো মনের একজন মানুষ কিন্তু  রাগ উঠলে রেহায় নেই। তো ঐদিন স্যার বাড়ির কাজ জমা দিতে বললেন। তিনি দাগ টানা খাতায় হাতের লেখা বাড়ির কাজ দিতেন। না করলেই পাছায় বারি খাওয়া লাগতো। আমি এই খুশির দিনে খাতা আনতে ভুলে গেছিলাম। আর কি!! বাড়ির কাজের খাতা না আনায় বাড়ির কাজ না করার অজুহাতে পাছায় একটানা ৫ টা বারি খাইলাম। একদম জ্বালাই ফেলছে। নতুন পোশাকে স্কুল শুরু হইল পাছায় বারি খেয়ে। তিনি করতেন কি ২ টা কাঠের স্কেল এক সাথে করে মারতেন যার ফলে মাইরটা একটু বেশিই জোরে লাগতে। এভাবে দিন যেতে লাগলো। কয়দিন পরেই শুরু হলো বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। আমাদের প্রতিদিন একটা ক্লাস হবার পর নিয়ে যেত স্কুলের খেলার মাঠে। মাঠটি স্কুল থেকে দূরেই ছিলো তো আমরা সবাই মঝা করতে করতে যেতাম। লাইন ধরে স্কুল থেকে বের হলেও একটু পর সেই লাইন আর থাকতো না। সবাই ছড়াই ছিটাই যাইত। অনেক বড় ভাইরা এই সুযোগে বাসায়ও চলে যেতো। 

 

আমিও মাঠে গেলাম। জুতা, ড্রেস একটা জায়গায় কয়েকজন মিলে রেখে চলে গেলাম। স্যার বললেন জোড়,বিজোড় আলাদা হয়ে দাঁড়াতে। আর উচ্চতা মেপে আমাদের গ্রুপ করলেন। প্রথম দিন আমি ১০০,২০০ মিটার দৌড় দিলাম। ১০০ মিটার দৌড়ে তো এক ছেলের সাথে পায়ে পায়ে লেগে পড়েই গেলাম। ২০০ মিটারে শুরুতে ভালোই দৌড় দিলেও শেষে আর আশানুরূপ ফল আনতে পারিনি। পরেরদিন আরো এক দুইটা খেলা দিলাম ভালো পজিশন নিতে পারলাম না। 

 

স্কুলের পাশাপাশি একটা কোচিং এ ভর্তি হলাম। ভালোই পড়াশোনা করতেছি। তখন ৩ টা পরীক্ষা হতো প্রথম সাময়িক, দ্বিতীয়, বার্ষিক পরীক্ষা। এপ্রিল মাসে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হলো। জিলা স্কুল জীবনের প্রথম পরীক্ষা। স্কুলে ডুকলাম এক মামা দাঁড়াই ছিলো উনি প্রবেশপত্র দেখে বললেন ঐ তিন তলায়। সিট পড়ল ৩০৮ নাম্বার রুমে। সিট খুজে বের করলাম। আমি মাঝখানে দুই পাশে দুই জন বড় ভাই। ডান পাশে দশম শ্রেণি বাম পাশে ষষ্ট শ্রেণি। পরীক্ষা দিতেছি আবার মাঝে মাঝে আশেপাশে সবাইকে দেখতেছি। বড় ভাইরা একজন আর একজনের থেকে দেখে লিখতেছে। আমি মনে মনে বলি আমি আমার বন্ধুরা নিজেরাই কোনো দেখা বা কথা বলা ছাড়াই লিখি, তারা পারে না কিছু দেখে দেখে লিখে। তো পরীক্ষা শেষ খাতা দেখানোর পালা। আমাদের সময় প্রভাতী শাখার খাতা দেখতো দিবা শাখার স্যাররা আর দিবা শাখার খাতা প্রভাতী শাখার স্যাররা। প্রথম দিন খাতা নিয়ে ডুকলেন অংক স্যার। খাতা সিরিয়াল ছিলো না অপেক্ষা করতেছি কখন আমার রোল ডাক পড়বে। পরে আমার রোল ডাকলো ক্লাস ক্যাপ্টেন খাতা দিলো। নাম্বার দেখে যা খুশি হলাম। আলহামদুলিল্লাহ্‌ অংকে ১০০ তে ১০০ পেয়েছিলাম। যা সারাজীবন মনে থাকবে। প্রথম  পরীক্ষা শুরুতেই ১০০। সব বিষয়েই ভালোই পেলাম । মোট ৬৫০ তে পরীক্ষা। প্রথম সাময়িকে পেলাম ৬০৬ নম্বর। দ্বিতীয় সাময়িকেও ৬০৬। বার্ষিক পরীক্ষায় পেয়েছিলাম ৬১২ নম্বর। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে ১২ দিনের মতো ছুটি দিতো। বন্ধ পেয়েই নানুবাড়ি চলে যাই। এভাবেই শেষ হয় জীবনের সব থেকে স্মৃতিময় ২০০৮ সাল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *