জীবন গল্প

তারিক কাজী ফিনল্যান্ডে খেললে কেমন হতো ক্যারিয়ার?

তারিক কাজী। আমরা এখন এই জন্য গর্ব করতেই পারি যে তারিক কাজীর মতো একজন ফুটবলার বাংলাদেশ জাতীয় দলে আছেন। 

 

কে এই তারিক কাজী? তারিক কাজীকে নিয়ে কেন আমরা গর্ব করতে পারি? ইউরোপের কোন পর্যায়ে খেলতেন তিনি? ফুটবলে কোন পর্যায়ে যাওয়ার  সম্ভাবনা ছিল তার? এবার এ বিষয়ে বিস্তারিত জানব আমরা। 

 

ফিনল্যান্ডের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবল লিগ ভেক্কাউসলিগার এক বারের চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১৯ সালের ফিনীয় কাপজয়ী ইলভেস তামপেরে ফুটবল ক্লাবের মূল দলে ২০১৭-১৮ মৌসুমে যোগদান করে দুই মৌসুম খেলেছেন। বর্তমানে ভেক্কাউসলিগার পয়েন্ট টেবিলের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে ইলভেস তিন নাম্বর পজিশনে অবস্থান করছে। ফিনল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে গোল কিপিং করা মিকা হিল্যান্ডার এ দলের হয়ে ২৩৫ ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন। এমনকি তিনি এ দলের অধিনায়কও ছিলেন। অর্থাৎ এ ক্লাবের গুরুত্ব বিবেচনায় এ কথা নির্দ্বিধায় বলাই যায় তারিক কাজী ফিনল্যান্ডের শীর্ষ স্থানীয় পর্যায়ে খেলেছেন এবং সেখান থেকে তার ফিনল্যান্ড জাতীয় দলে খেলার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। এছাড়াও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তারিক কাজী ফিনল্যান্ডের অনূর্ধ্ব ১৬, ১৭,  ১৮, ১৯ দলে খেলেছিলেন। আর একজন খেলোয়ার যখন তার নিজের দেশের বয়স ভিত্তিক সবগুলো দলের হয়ে খেলেন তখন ভবিষ্যতে জাতীয় দলের হয়ে খেলা তার জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিশেষ করে দেশের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৭ ও অনূর্ধ্ব ১৯ দলের খেলোয়াড় যে ভবিষ্যৎ জাতীয় দলের খেলোয়ার হবে এটা মানুষ ধরেই নেয়। সুতরাং তারিক কাজীরও ছিল ফিনল্যান্ড জাতীয় দলে খেলার সুবর্ণ সুযোগ।

 

আর ও পড়ুনঃ আপনিও কি Sapiosexual?

 

তাহলে যেখানে ফিফা র‍্যাংকিং এর ১৮৪ তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ ফিফা র‍্যাংকিং এ ৫৪ তম অবস্থানে থাকা ফিনল্যান্ডের থেকে র‍্যাংকিং এ ১৩০ ব্যবধানে পিছিয়ে সেখানে বড় দেশের  বড় তারকা ফুটবলার হওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন তারিক কাজী বাংলাদেশে এলেন খেলতে? স্রেফ দেশের প্রতি ভালোবাসার টানে। আর কিছুই নয়। মা ফিনল্যান্ডের অধিবাসী হলেও বাবার দেশের বাড়ি বাংলাদেশের নওগাঁ জেলায়। বাবার কাছেই তিনি বাংলাদেশের ফুটবলের কথা শুনেছেন এবং বাংলাদেশের ফুটবলের প্রেমে পড়েছেন। পরে নিজের ইচ্ছায় পিতৃভূমি টানে বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলতে মনস্থির করেন তিনি। ফিনল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় ফুটবল লিগের খেলা তারিক কাজী বিশ্ব ফুটবলের অর্থের ঝনঝনানির এই সময়ে বছরে  মাত্র ৩০৯৭৮০০ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ ফুটবল প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব বসুন্ধরা কিংসে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। অনেকে মনে করতে পারেন  বছরে প্রায়  ৩১ লাখের মতো ইনকাম তার, তাহলে এটা এত অল্প টাকা কিভাবে হল? তাদের জ্ঞাতার্থে বলতে হয় ফিনল্যান্ডের ফুটবলারদের গড় আয় বছরে ৪২৩৬৭ ইউরো বা ৪৩৭২০৫৭.১১ টাকা অর্থাৎ সাড়ে ৪৪ লাখ টাকার মতো। তাই বলাই যায়, দেশের প্রতি ভালোবাসার টানে টাকাকে তুচ্ছ করতে পিছপা হননি তারিক কাজী। 

 

বসুন্ধরা কিংসে যোগদানের পর নিজেকে প্রমাণ করেই জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন তারিক কাজী। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে ডাক পেলেও ইনজুরির কারণে বাংলাদেশের জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয়নি তখন। কিন্তু সব অপেক্ষার অবসান হয় তার এ মাসের ৩ তারিখে। জুন এর ৩ তারিখ, ২০২১ তারিখ কাজীর জন্য স্মরণীয় একটি দিন। এই দিনে কাতারে ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ারস ম্যাচে আফগানিস্তানের সাথে তার অভিষেক হয়। রাইট ব্যাক হিসেবে খেলেন এবং এককথায় মানুষের হৃদয় জয় করে নেন। ল্যাফট উইং দিয়ে আফগানিস্তানের আক্রমণগুলো বালির বাঁধের মতো গুড়ে দিচ্ছিলেন তারিক কাজী। বাংলাদেশের দর্শকরা এইদিন রাইট ব্যাক সাইট নিয়ে নির্ভার ছিলেন সে পজিশনে তারিক কাজী এত ভালো খেলছিলেন বলে। এমনকি প্রথমার্ধে ল্যাফট উইং এর সব আক্রমণ তারিক কাজীতে এসে থেমে যাচ্ছিলো বলে আফগানিস্তানের কোচ খেলার কৌশল পাল্টিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে তারিখ কাজীর বিপরীত সাইডে তাদের রাইট উইং দিয়ে আক্রমণ চালাতে বাধ্য হয়। ম্যাচটি ড্র হলেও তারিক কাজীর অভিষেক ম্যাচের পারফরম্যান্স সকলকে মুগ্ধ করে রাখে। 

 

এ ম্যাচের ঠিক তিন দিন পরেই দক্ষিণ এশিয়া ডার্বি বাংলাদেশ- ইন্ডিয়া ম্যাচেও বাজিমাত করেন তারিক কাজী। বাংলাদেশ ম্যাচ হারলেও পারফরম্যান্স দিয়ে দর্শকের মন জয় করে নেন তিনি।

 

 এ ম্যাচ দুটোর পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ যেন রাইট ব্যাকে পেল এক অত্যন্ত প্রহরীকে যার উপর ভর করে বাংলাদেশের ডিফেন্সের দূর্গ লম্বা রেসের সার্ভিস পাবে এই আশায় দর্শকরা এখন থেকেই বুক বেঁধেছেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link