কী এবং কেন?

গুড়ো দুধ কি আসল দুধের মতোই উপকারী?

সুপ্রাচীন কাল থেকেই দুধ একটি উৎকৃষ্ট ও উপাদেয় খাদ্য। দুধ মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মিটিয়েছে যুগ যুগ ধরে। দুধ স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে বেশিক্ষণ সংরক্ষণ করা যায় না। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে সহজে পরিবহন, সংরক্ষণ ও দীর্ঘসময় ব্যবহারের প্রয়োজনে আবির্ভাব হয় গুড়ো দুধের। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে দুধ কে গুড়ো দুধে পরিণত করে ব্যবহার শুরু করে মানুষ। গুড়ো দুধ প্রায় ১৮ মাস পর্যন্ত নষ্ট হয় না। পরিবহন করতে সহজ হয়। বাজারে নানা ব্রান্ডের গুড়ো দুধ পাওয়া যায়। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, এসব গুড়ো দুধ কি আসল দুধের মতোই পুষ্টিকর? নাকি এসব গুড়ো দুধ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। চলুন জানার চেষ্টা করি। 

 

আসল দুধকে  পাস্তুরায়নের মাধ্যমে গুড়ো দুধ তৈরি করা হয়। পাস্তুরায়ন হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে স্টেইনলেস স্টিলের একটি পাত্রে দুধকে প্রায় ৭১° সেলসিয়াস তাপমাত্রায়   ১৫ সেকেন্ড ধরে তাপ প্রদান করা হয় এবং ১৫ সেকেন্ড পর খুব দ্রুত তাপমাত্রা ৩° সেলসিয়াসে নামিয়ে আনা হয়। এই প্রক্রিয়া বার বার পুনরাবৃত্তি করা হয় যে পর্যন্ত দুধ থেকে সব পানি অপসারিত না হয় (দুধে ৮৫% পানি থাকে)। এরপর আরও কিছু প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে দুধকে গুড়ো দুধে পরিণত করার মাধ্যমে বাজার জাত করা হয়। সত্যি বলতে গুড়ো দুধ এবং আসল দুধের মধ্যে পুষ্টি উপাদান প্রায় একই থাকে। তেমন কোনো পার্থক্য নেই। গুড়ো দুধে প্রায় ২১ প্রকার অ্যামিনো এসিড, মিনারেলস ও ভিটামিন রয়েছে। যেগুলো আসল দুধেও পাওয়া যায়। কিন্তু কিছু পার্থক্য রয়েছে। আসল দুধে একটু বেশি পরিমাণে ভিটামিন বি-৫, বি-১২, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে গুড়ো দুধের তুলনায়। তবে গুড়ো দুধে কিছু বাড়তি উপাদান যুক্ত হয় প্রক্রিয়াজাতকরণের সুবিধার্থে। গুড়ো দুধে অক্সিডাইজড কোলেস্টেরলের পরিমান বেশি। এটি একদিকে যেমন উপকারী অপরদিকে কেউ যদি বাছ বিচার ছাড়া বেশি পরিমাণে গুড়ো দুধ খায়, তাহলে ধমনীতে কোলেস্টেরল জমে নানা রকম হৃদরোগ হতে পারে। তবে গুড়ো দুধ সহজে হজম হয়। যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে, এমনি  দুধ খাওয়া তাদের জন্য অনেক সময় বদহজমের কারণ হয়।  কারণ এমনি দুধে ল্যাকটোজের পরিমাণ বেশি থাকে যা সহজে হজম হয় না। কিন্তু গুড়ো দুধে রয়েছে স্বল্প পরিমাণ ল্যাকটোজ। যা সহজে আমাদের দেহ হজম করতে পারে। এছাড়া গুড়ো দুধ অনেকদিন পর্যন্ত খুব সহজেই ফ্রিজ ছাড়াই সংরক্ষণ করা যায়। গুড়ো দুধ পরিবহন করাও সহজ। সবথেকে বড় যে পার্থক্যটি রয়েছে এমনি দুধ ও গুড়ো দুধের মধ্যে তা হলো স্বাদ এর পার্থক্য। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে আসল দুধ খাওয়ার মজাই আলাদা। এছাড়া চা, কফি, কেক ইত্যাদি খাবারে গুড়ো দুধের বদল  আসল দুধ ব্যবহার করলে স্বাদ অনেকগুণ বেশি পাওয়া যায়। তবে গুড়ো দুধ ও আসল দুধের মধ্যে পুষ্টি উপাদানের কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু গুড়ো দুধ ব্যবহার, সংরক্ষণ, পরিবহন অনেক সহজ। আর সবথেকে বড় যে সুবিধাটি রয়েছে তা হলো গুড়ো দুধ এর মূল্য আসল দুধের প্রায় অর্ধেক অথচ পুষ্টিগুণ সমান। তাই আপনি আপনার পছন্দমতো গুড়ো দুধ কিংবা আসল দুধ যে কোনোটিই খেতে পারেন। উভয়ই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে হ্যা, অনেক সময় কোম্পানিগুলো গুড়ো দুধে ভেজালযুক্ত করে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই এক্ষেত্রে বিশ্বস্ত ব্রান্ডের তৈরি গুড়ো দুধ ক্রয় করাই শ্রেয়। আর গুড়ো দুধ যে কৌটায় সংরক্ষণ করবেন তা যেন কোনোভাবে দূষিত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখবেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link