ছোট গল্পসাহিত্য

অশরীরী – বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে

ভৌতিক গল্প

হাবীব আজ সকালে এসেছে বাড়িতে ৩  দিনের ট্যুর শেষে। এস এস সি পরীক্ষা শেষে সে গিয়েছিল কুমিল্লা ভ্রমণে। ঘুরে যে শুধু আনন্দ নেই তা গত তিন দিনে সে বুঝেছে সাড়ে ৩ ঘণ্টা ঘুমিয়ে। তাই ঘরে ঢুকেই মাকে বলল, ঘুমুব। মা ছিল রান্না ঘরে। ঘরে ঢুকেই হাবীবের এই কথা শুনে মা তেড়ে এসে বলল, ঘুমুবি তো খাট এনে দেই ঘুমো। মার সাথে হাবীব এমনি বন্ধুসুল্ভ। মার অফিস ১০ টায়। মা তাকে আদর করে দিয়ে পণে দশটায় বেরিয়ে গেল। হাবীব খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলো। 

দুপুর ১২ টায় পাশের বাড়ির নুপুর খালার ডাকাডাকি আর দরজায়  ধাক্কার শব্দে ঘুম ভাঙল হাবীব। ঘুম জড়িত চোখে সে দরজা খুলতেই খালা বলল, তাদের বাড়ির দুই বাড়ি পরেরই রানু খালার বাড়িতে তাদের নতুন এক ভাড়াটিয়ের মেয়ে সুজনা গলায় দড়ি পেচিয়ে ফেনে ঝুলে  আত্মহত্যা করেছে। হাবীব বলল, খালা আমি তো চিনিনা আর আম্মুও বাসায় নেই তাই আমি দেখতে যাব নাহ। নুপুর খালার উৎসাহ কমে গেলো তিনি বললেন তুই আর মানুষ  হলি  নাহ। যাহ তুই ঘরেই থাক , এই বলে নুপুর খালা চলে গেলো। হাবীবের বিরক্ত লাগল, মানুষ শুধু  নিজের অবস্থানের কথাই অনুধাবন করে অন্যের কিসে ভাল কিসে খারাপ লাগছে তা কখনো ভাবে না। সে ভাবতে ভাবতে ঘুমুতে যায় কিন্তু এবার আর ঘুম আসছে নাহ। 

বিকেলে আজ তিন দিন পর হাবীব তার নিজ এলাকায় বেড়িয়েছে ঘুরতে। বন্ধুরা সবাই কোথায় কে জানে? আজ একাই ঘুরবে সে মনস্থির করল। ঘুরতে ঘুরতে মাগরিবের নামাজের সময় হয়ে আসলে সে নামায পড়ে বাড়িতে ফিরছিল। হটাত রাস্তায় তাদের গলিতে ঢুকার সময় সে শুনল কে জেনো তাকে ডাকছে। হাবীব খেয়াল করল তার থেকে ২০ মিটার দূরে একটি বাসার বারান্দায় ২৪-২৫ বছরের একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে গ্রিল ধরে। হাবীব তাকে চিনে না তবে কোন বিপদ হয়েছে কিনা তা জানতে এগিয়ে যায়। বারান্দায় কোন লাইট নেই তাই মেয়েটির মুখ ও দেখা যাচ্ছে নাহ। সে হাবীব কে বলল, পাশের দরজাটা খুলে দিতে। হাবীব দেখল দরজাটা বারান্দা হতে এত কাছে যে হাত বাড়িয়ে খোলা মেয়ে টির জন্য সম্ভব। মনে মনে বিরক্ত হল সে। হাবীব ভাবল সে যেহেতু এসেই গেছে দরজাটা খুলেই চলে যাবে । সে দরজা খুলতেই দেখল মেয়েটি দরজার সামনে। সে কিছুতা চমকে গেলো। তবে ভেতরে লাইট বন্ধ থাকাতে এবারও সে মেয়েটির মূখ দেখতে পাড়লো না।

 মেয়েটি বলল, ভেতরে এসো। হাবীব বলল, আমার কাজ আছে এখন আমাকে যেতে হবে, সরি। এই বলে সে যেতে শুরু করল। হটাত, পেছন থেকে ভারি পুরুষের গলায় হাবীব শুনতে পেলো, তোদের মত ছেলে মানুষের জন্যই আমাকে ফাঁস নিতে হয়েছে তোদের আমি ছাড়ব নাহ। হাবীব চমকে পেছনে তাকায়। একতলা বাড়িটির ছাদে একটি কুচকুচে কালো, ৭-৮ ফুট লম্বা জীব, যার নাক থেকে রক্ত ঝরছে, জিহ্বা বেরিয়ে আছে, চুল গুলোতে সে হাত দিয়ে বিলি কাটছে। হাবীবের দেখে মনে হল তেল মাখছে। হাবীব সেখানেই জ্ঞান হারাল।

যখন সে চোখ মেলল, তার চোখের সামনে তার ঘরের ছাদ। সেখানে ফ্যান ঘুরছে। আর পাশে বসে মা মাথায় পানি দিচ্ছে। পাশে নুপুর খালা তার মাকে বলছে হাবীব যে বাড়ির সামনে পড়েছিল সেটা নাকি তাবিজ দিয়ে বন্ধ করা। মেয়েটি নাকি ভাল ছিল নাহ। নুপুর খালার কথায় হাবীব বুঝতে পারল কেন মেয়েটি কাল বাড়ি থকে বেরুতে পারেনি। হাবীবকে চোখ খুলতে দেখে মা বলল, বাবা কি হয়েছিল? নুপুর খালাও ব্যস্ত হয়ে উঠল। হাবীব বলল, মাথাটা ব্যাথা করছে। নুপুর খালা বলল, আপু আপনি খবার নিয়ে আসুন কাল রাত থেকে কিছু খায়নি। নুপুর খালাও উঠতে উঠতে বলল পানি নিয়ে আসি তুই শুয়ে থাক। হাবীব মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। হাবীব দেখল মা ও খালা দরজার কাছে চলে গেছে। মা বেড়িয়ে গেল, কিন্তু খালা দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। হাবীব বলতেই যাচ্ছিল কিছু বলবেন খালা, তার আগেই খালা পিছে তাকিয়ে একটি মুচকি হাসি দিল আর তার চেহারা পালটে গেলো কাল রাতের সেই বীভৎসতায় …।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link