করোনা মহামারির এই সময়ে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন হিজড়া সম্প্রদায়। ঢাকা মেডিকেল এ সাহস ও মানবিকতার পরিচয় দিলেন স্বেচ্ছাসেবক একদল, যাদের বেশিরভাগই হিজড়া। যেসব করোনা রোগী ঢাকা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে আসছেন তাদের সারাদিন ধরে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সমাজের তথাকথিত এই সংখ্যালঘুরা। হাসপাতালে আসার পর একজন করোনা রোগীর যেসকল সহযোগিতার প্রয়োজন পরে যেমন অ্যাম্বুলেন্স বা অন্য যানবাহন থেকে রোগিকে নামানো, ভেতরে নেয়া, ভর্তি হতে সহযোগিতা করা কিংবা ওষুধ এনে দেয়া ; মানবিকতার খাতিরে এমন সকল কাজই করছেন তারা দায়িত্বের সাথে। হিজড়াদের থেকে অপ্রত্যাশিত এই সকল সেবা পেয়ে যারপরনাই খুশি রোগীর আত্বীয়স্বজনেরা। যখনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সামনে রোগীরা আসেন তখনই এভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে দেখা যায় হিজড়া সম্প্রদায় দলভূক্ত স্বেচ্ছাসেবককে। মহামারির এই সময়ে সকল ভয়কে তুচ্ছজ্ঞান করে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক এই দলটি। যাদের মধ্যে অধিকাংশ সদস্যই হিজড়া সম্প্রদায় এর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সংগঠন- বৃহন্নলা যারা হিজড়াদের উন্নয়নে কাজ করে তাদের তত্বাবধানে এই সেবামূলক কার্যক্রম চলছে । এর কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরে। ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে গতবছর মার্চ মাসে করোনা রোগীদের পাশে দাড়ান তাঁরা। যেহেতু তারা র্দীঘসময় করোনাক্রান্তদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাই তাদের মধ্যে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন । তবে তারা এর পরও পিছু হটেননি। তারা ৬ জন মিলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা করোনা রোগীদের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্থাৎ সারাদিন এবং সার্বক্ষণিক সহায়তা দিয়ে থাকে এই স্বেচ্ছাসেবকরা।
মানবিক দিক বিবেচনায় রেখে মানুষকে সেবা দেওয়া ও হিজড়া সম্প্রদায়কে সমাজের মূলধারায় যুক্ত করার জন্যই এই সেচ্ছাসেবক সংগঠন এর কার্যক্রম।
সাধারনত রাস্তায় কিংবা কারো বাড়িতে সাহায্যের জন্য গেলে হিজড়া হিসেবে তারা অবজ্ঞার স্বীকার হন কিন্তু সংকটের এই সময়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তারা সবার ভালোবাসা ঠিকই পাচ্ছেন।
রোগীর স্বজনরা হিজড়াদের এমন মানবিক ও সাহসী ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বৃহন্নলার পক্ষ থেকে অটোরিকশার ব্যবস্থা করা হয়েছে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের মধ্যে করোনার রোগী ও স্বজনদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ।
সমাজে সবসময় অবহেলার স্বীকার এই হিজড়া সম্প্রদায় তাদের এই মানবিক কাজের মাধ্যমে মানবিকতার বাস্তব উদাহরণ হয়ে থাকবে।