ইসলামইসলামিক বিষয়াদি

হৃদয়বিদারক মৃত্যু : হামজা (রাঃ)

হামযাহ বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব (রা.) ছিলেন নবী (সা.) এর আপন চাচা,দুধ ভাই এবং বন্ধু। তিনি মহানবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর নবুয়্যত প্রাপ্তির ৬ষ্ঠ বৎসরের শেষ দিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

 

ইসলাম গ্রহণের পর হামযাহ (রা.) অনেক জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। ‘সারিয়াতু হামাযাহ’ সংঘটিত হওয়ার সময় (১ম হিজরীর রামাযান মাসে) ইসলামের সর্বপ্রথম ঝান্ডা হামযাহ (রা.)-কে প্রদান করা হয়। ‘আবওয়া’র যুদ্ধেও মহানবী (সা.) হামযাহকে নেতা ও ঝান্ডাবাহী এবং ‘যুল আশীরা’র যুদ্ধেও তাকে ঝান্ডাবাহী নিযুক্ত করেছিলেন। বদর যুদ্ধে অনেক কুরাইশ নেতা ও সৈন্য তার হাতে নিহত হয়েছিল। ২য় হিজরীর শাওয়াল মাসে সংঘটিত বনু কাইনুকার যুদ্ধেও তিনি অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং মহানবী (সা.) এ যুদ্ধেও তাকে ইসলামী বাহিনীর পতাকা অর্পণ করেছিলেন। তৃতীয় হিজরীর ৭ই শাওয়াল শনিবার সকালে সংঘটিত উহুদ যুদ্ধে ওৎ পেতে থাকা শক্রর বর্শার আঘাতে হযরত হামযাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব (রা.) শাহাদত বরণ করেন।

 

এ যুদ্ধে তার বীরত্ব ছিল কিংবদন্তিতুল্য। প্রতিপক্ষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তিনি সিংহ বিক্রমে লড়াই করছিলেন। তিনি দু’হাতে এমনভাবে তরবারি পরিচালনা করছিলেন যে,শত্রুপক্ষের কেউ তার সামনে টিকতে না পেরে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এদিকে মক্কার নেতা যুবাইর ইবনু মুত্বঈ‘মের হাবশী গোলাম ওয়াহশী বিন হারব একটি ছোট বর্শা হাতে নিয়ে আড়ালে ওঁৎ পেতে বসেছিল হামযাহ (রা.)-কে নাগালে পাওয়ার জন্য। যুবায়ের বদর যুদ্ধে নিহত তার চাচা তু‘আইমা বিন ‘আদী হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ওয়াহশীকে নিযুক্ত করেছিল হামযাহকে হত্যা করার জন্য। আর এর বিনিময়ে তাকে মুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ছিল।

 

যুদ্ধের এক পর্যায়ে সিবা‘ (سباع ) বিন আব্দুল ওযযা হামযার সামনে আসলে তিনি তাতে আঘাত করেন। ফলে তার মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তিনি সামনে অগ্রসর হতে থাকেন। এদিকে বর্শা তাক করে বসে থাকা ওয়াহশী সুযোগমত হামযার অগোচরে তার দিকে বর্শা ছুড়ে মারে। যা তার নাভীর নীচে ভেদ করে ওপারে চলে যায়। এরপরেও তিনি তার দিকে তেড়ে যেতে লাগলে পড়ে যান এবং কিছুক্ষণ পরেই শাহাদত বরণ করেন। এ যুদ্ধে শহীদ হওয়ার আগ পর্যন্ত হামযাহ একাই ৩০ জনের অধিক শত্রু সেনাকে হত্যা করেন। আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিন উৎবাহ বদর যুদ্ধে তার পিতার হত্যাকারী হামযার উপরে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তার বুক ফেড়ে কলিজা বের করে নিয়ে চিবাতে থাকে এবং তার নাক ও কান কেটে গলার হার বানায়। 

READ MORE:  বিস্তারিত জানুন : চার মাযহাবের চার ইমাম

 

এই বীরযোদ্ধাকে উহুদ প্রান্তরে (শহীদের কবরস্থানে) সমাহিত করা হয়। তার জানাযায় দাড়িয়ে রাসূল (সা.) অনেক উচ্চ স্বরে ক্রন্দন করেন। হযরত ফাতেমা (সা.আ.)প্রায়ই তার কবর জিয়ারতে যেতেন। তার সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন,

 

دَخَلْتُ الْجَنَّةَ الْبَارِحَةَ فَنَظَرْتُ فِيهَا فَإِذَا جَعْفَرٌ يَطِيرُ مَعَ الْمَلاَئِكَةِ وَإِذَا حَمْزَةُ مُتَّكِئٌ عَلَى سَرِيرٍ

 

‘আমি গত রাতে জান্নাতে প্রবেশ করে দেখলাম,জা‘ফর ফেরেশতাদের সাথে উড়ে বেড়াচ্ছেন আর হামযাহ একটি আসনের উপর ঠেস দিয়ে বসে আছেন। (আল-মুস্তাদরাকে আলাছ সহীহাঈন,মুহাম্মাদ ইবনু আবদিল্লাহ আল-হাকিম আন নিসাপুরী,বৈরূতঃ দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ ১৪১১/১৯৯০) হা/৪৮৯০; সহীহুল জামে‘ হা/৩৩৬৩ ।)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *