জীবন গল্প

স্বপ্ন ভঙ্গ – ৫

ছোট একটি দুঃখ নিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলাম। পিএসসিতে বৃত্তিটা পেলে হইতো একটু ভালো লাগতো। খারাপ লাগে তখন যখন আশেপাশের বন্ধু পেলো আমি পেলাম না। যাই হক সব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াশোনা শুরু করলাম। এইবার স্বপ্নটা আরো বড়। ক্যাডেটে চান্স পাওয়া। আসল কথা অনেকে জানেও না ক্যাডেট আসলে কি, কেন যাব, গেলে কি হবে। হুজুগে সবাই যেতে চায়। তো সবাই তাড়াতাড়ি ক্যাডেট কোচিং এ ভর্তি হইতেছে পরে গেলে আবার সিট পাওয়া যাবে না। আমারো সবার মতো ইচ্ছা ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠব, ক্যাডেট কোচিং পড়ব, চান্স পেলে তো কথাই নেই।

 

 এখন কোন কোচিং এ ভর্তি হব এটাই বুঝে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছিল। যে কোচিংয়েই যাই বলে ২/৩ দিন ক্লাস করো তাইলেই বুঝবা আমরা কেমন পড়াই। সমস্যা ছিলো সম মানের ২/৩ টা কোচিং হওয়ায় সবারই কম বেশি সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগে। তো সিদ্ধান্ত নিলাম ২/৩ টা যা আছে সব গুলায় এক / দুই করে ক্লাস করে দেখবো। যেটা ভালো মনে হবে ঔটায় ভর্তি হব। তো প্রথমে গেলাম দি ক্যাডেট কোচিং সেন্টার, সেখানে আমি ৩য় শ্রেণিতেও কোচিং করেছি। এতোটাও খারাপ লাগলো না  কিন্তু ক্লাসে ভালোদের সংখ্যা কম পেলাম। যারা বেশি কথা বলে, ক্লাসে বিশৃঙ্খলতা করে তারাই বেশি। তাই মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিলাম দি ক্যাডেট বাদ। পরে এক কাছের বন্ধুর সাথে পরামর্শ করলাম। বললাম কই ভর্তি হবি? কোথায় ক্লাস করতাছোছ!! ও দিবা শাখার ছিলো তাই দেখা কম কম হতো। তো বললো, একটু নাম কম এমন একটা কোচিং অপূর্ব ক্যাডেট কোচিং। বললো কয়দিন ক্লাস কর দেখ কেমন লাগে।

 

 তো তখন ফেব্রুয়ারি মাস, শীতকাল সকাল ৭ টায় একটা ব্যাচ আছে। আর গুলায় তেমন ছাত্র না হওয়ায় একটাই ব্যাচ রেগুলার ছিলো। তো ওর সাথেই গেলাম কয়দিন। ভালোই লাগলো ক্লাস। মা বললো আর না ঘুরে এটা ভালো লাগলে ভর্তি হইয়া যা। ভর্তি হব হব এমন সময় তারা কোচিং সেন্টার নিয়ে গেলো অনেক দূরে। যা আমার বাসা থেকে অনেক দূরবর্তী এবং রিকশা ভাড়াও লাগবে অনেক। ঐসময় এতো খরচ করে যাওয়া আসা করে কোচিং করার  কোনো মানেই হয় না। যেহেতু কাছের মধ্যে আরো ভালো কোচিং আছে। অবশেষে এটাও বাদ। রইল গালিব নামে এক কোচিং সেন্টার। গিয়ে দেখলাম সব ভালো ছাত্ররা এখানেই। তাই ভরসা পেলাম সব ভালো যখন এখানে আছে মন্দ হবে না। ওরা তো আর না বুঝে আসে নাই। আর না ভেবে ভর্তি হয়ে গেলাম। ক্লাস করতেছি ভালো বুঝায় আমিও বঝতেছি। শহরের ভালো স্যাররাই ক্লাস নেন। দৈনিকের পড়া দৈনিক আদায় করে। না পারলে ঐখানে মুখস্থ করায় ছাড়ে। এরপরই ঘটে স্বপ্ন ভঙ্গ।

READ MORE:  জীবনের সেরা অর্জন - ২

 

ছোটো বোনকে স্কুল / কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করানোর জন্য যান এক স্কুলে। তো সেখানে কথা বলে আসার সময় দেখেন গার্লস স্কুলে ক্লাস ১ এর ভর্তি ফরম ছাড়ছে। আমার বোন তো এখনো কিছুই পারে না। নার্সারিতে সবে ভর্তি হবে। অনেক আন্টিরা মাকে বললেন ফরম নিয়ে যান। লটারি তে চান্স হলে হইলো না হইলে নাই। বা চান্স হলেও ইচ্ছা না থাকলে ভর্তি না হক। ফরম তুলতে তো নিষেধ নেই। তো মা সবার কথা শুনে গার্লসের ফর্ম তুললেন। 

 

লটারির দিন সবাই গেলো। ছোট বোনও সাথে গেলো। আল্লাহর কি নীলা খেলা। লটারিতে নাম উঠানোর ৩(তিন) নাম্বারেই আমার বোনের রোল উঠলো। চান্স হয়ে তো সবাই আত্তহারা। যে স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য কতো যুদ্ধ। আর সেখানে ঐবার লটারি পদ্ধতি হওয়ায়, ইচ্ছা না থাকা সত্তেও ভাগ্য খুলে গেলো। এখন বড় চিন্তার বিষয় ভর্তি হবে কিনা। ও তো ক,খ,এ,বি,সি কিছু জানেও না চিনেও না তেমন। যা বুঝে, চিনে তাতে এতো বড় স্কুলে ক্লাস ১ এ পড়ার জন্য যথেষ্ট না। সবাই বলতেছে ভর্তি হক। আস্তে আস্তে শিখবে সব। এখন ভর্তি না হলে ভবিষ্যৎ এ যদি চান্স না হয়। তাই সব দিক দিয়েই একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম। কি করা যায়। এদিকে কে ওরে স্কুল নিয়ে যাবে, কে নিয়ে আসবে। বাবা শুক্রবার ছাড়া থাকে না। মায়েরও সকাল, বিকাল অফিস। আমার স্কুল, কোচিং আছে,আবার নিজের পড়াও তো পড়া লাগবে। এখন কে ওরে দেখাশোনা করবো,স্কুল যাওয়া আসা, ওরে পড়া দেখানো। গাইড হিসেবে একজন তো থাকাই লাগবে। আশেপাশের মানুষের কথা একটাই এই সুযোগ বারবার আসবে না। এখন যদি সিটটা ছেড়ে দেয় তাইলে পরে যদি না চান্স হয়। এমন একটা নামকরা স্কুল কে হাত ছাড়া করবে। সব চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো গার্লস স্কুলেই ভর্তি করানো হবে।

READ MORE:  মুহূর্ত

 

 স্বপ্ন ভঙ্গ এখানেই। সব দায়িত্ব পরলো আমার ঘাড়েই। বাবা মা বললো তুই ওর দেখাশোনা কর। স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা, একটু পড়া দেখানো। বোন চান্স পেয়েছিলো বিকাল শিফটে। তাই কাজটা আরো কঠিন হয়। আমি সকালে স্কুল করেই সরাসরি বাসায়, এসেই সাথে সাথে বোনকে স্কুলে নিয়া যাই। নিজের সাইকেল থাকায় যাতায়াত খরচটা কম হতো। স্কুলের পাশাপাশি ওরে একটা প্রাইভেট টিচারের কাছে দেওয়া হলো ওদেরই ক্লাস টিচারের কাছে। সেটা ছিলো বিকাল ৩ টায়। আমার ২ টায় ক্যাডেট কোচিং ছিলো। এখন কি উপায়!!! আমার কোচিং এ গিয়ে স্যারদের বলা হলো আমাকে যেন ২:৫০ এ একটু ছাড়া হয় যাতে বোনকে  ৩ টায় প্রাইভেটে দিয়ে আবার আমার কোচিং এ আসতে পারি। তে তাই হলো ২ টায় আমি আমার কোচিং এ যাই এক ক্লাস পরে ২:৫০ বাসায় গিয়ে বোনকে নিয়ে প্রাইভেটে বসায় দিয়ে চলে আসতাম কোচিং এ। এভাবে চললো ২ মাস। এখন ঘটলো আর এক কাহিনী। বোন একা কান্না করে। অনেক রকমের মানুষজন। ও এতো মানুষের মাঝে কখনো যায় নাই, পড়ে নাই। দেখা যায় সবাই ভালো পারতেছে, ও পারে না। ভয় পায়। ম্যাম হইতো ওর উপর রাগও করে। তো এখন বলে ওর সাথে একজন থাকা লাগবে প্রাইভেটে। নইলে পড়বে না। পরে আমার ক্যাডেটের স্বপ্ন বাদ দিয়ে ওর সাথে সব সময় লেগে থাকলাম। প্রাইভেটে গিয়ে পাশে বসে থাকতাম আর সাহস জোগাতাম। আর আমি স্কুল ছাড়া সব বাদ দিয়ে নিজে পড়তে থাকলাম। ওরেও সাপোর্ট দিচ্ছি নিজের টাও গাইড বই পরে একা একা আগালাম। শেষমেশ আর ক্যাডেটে ভর্তি তো দূরে থাক পরীক্ষাও দিতে পারলাম না। সব স্বপ্ন ছারখার হয়ে যায়। 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *