বদ জ্বীনের গল্প -পর্ব -২
#সে ঘরেই আছে
ওই রাতের পর থেকে মাহিন কিছু অদ্ভুত আচরন করতে থাকে।খাবারের চাহিদা বেড়ে যায় তার। অন্যসবার চেয়ে দুই তিন গুন বেশি খায় সে। মাহিন মেট্রিক পরীক্ষার্থী। পড়াশুনায় তেমন একটা মন নেই।মাঝেমধ্যে বাবুল মিয়ার সাথে মাঠে কাজ করে।
ছোট ভাই ফাহিম পড়াশোনা বন্ধ করেছে এক বছর হলো। মাহিন থেকে দুই বছরের ছোট সে। গ্রামের বাজারে একটা দোকানে কাজ করে। বেতন থেকে কিছু টাকা সংসারে দেয়।
এদিকে খাবার নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হয় মাহিন আর ফাহিমের মাঝে। ফাহিম মাহিনকে বলেঃ এক টাকা রোজগার করো না কিন্তু খাও তিনজনের খানা। এক টুকরো মাছে তোমার হয়না। প্রতি বেলাতে তিন চার টুকরো মাছ খাও। ভাত তরকারি সবকিছুই তুমি বেশি বেশি খাও। ইনকাম করে খেতে পারো না? মাহিন ফাহিমের কোন কথার জবাব দেয় না। শুধু নিজের খাবার খেয়ে উঠে যায়।
একটা সময় প্রতিদিনই খাবার নিয়ে ঝগড়া হতে থাকে মাহিন ফাহিমের। মাহিনের অতিরিক্ত খাবার খাওয়াটাই ফাহিমের পছন্দ হয় না। শুধু তার কারনে বাজার-সদাই বেশি করা লাগে। যা বাবুল মিয়ার জন্য কষ্টকর। অন্যদিকে বাবাকে সাহায্য করার জন্য ফাহিম সামান্য বেতনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশ্রম করে। নিজের পরিশ্রমের বেতন দিয়ে বিভিন্ন সময় কাঁচের জিনিসপত্র কিনে আনে সে।
মাকে দিয়ে বলেঃ মেহমান আসলে এগুলো দিয়ে খাবার দিও। কিন্তু কোন খাবার আনলে সেটা মাহিনই বেশিরভাগ খেয়ে ফেলে। এ নিয়ে মা-বাবাকে বললে তারা জবাব দেয়ঃ থাক বাবা সে তোর পর কেউ না। তোর আপন ভাই ই তো! এতদিন সে এভাবে খেতনা; হঠাৎ করে তার খাবারের চাহিদা বেড়ে গেছে। ওর লগে যেটা শোয়ার হইছে সেটাই বেশি খাওয়ায় ওরে। কোন বেলায় কম খাইলে জ্বীনটা ওরে অনেক কষ্ট দেয়। অনেক কবিরাজের কাছে তো নিলাম কিন্তু কোন কাজ হইতাছে না। থাক দুষ্টটা যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা একটু কম খাইয়া ওরে খাইতে দেই। এই নিয়ে মন খারাপ করিসনা।
ফাহিমের এসব বিশ্বাস হয়না। সে তখন একটা কথাই বলেঃ তাইলে ওরে কইয়ো নিজে ইনকাম কইরা ইচ্ছামত খাইতে। ওর কারনে তোমরাও যে কম খাও সেটা তো আমি দেখি। তারপরও পারভীন ও বাবুল মাহিনকে খাবার নিয়ে কিছু বলে না। উল্টো ফাহিমকে বলে সে যেন মাহিনকে কিছু না বলে। এই নিয়েই ফাহিমের কষ্ট।
লেখকঃ জোনাইদ হোসেন
পেশাঃ সাংবাদিক