মুহূর্ত

মুহূর্ত ১. এখন রাত সম্ভবত দুইটা কি তিনটা হবে।  অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল-  গভীর রাতে পতেঙ্গা বিচের রেলিং  এ  পা দুলিয়ে  বসে জোছনা দেখব।  এখন সেই পতেঙ্গা বিচেরই রেলিং এ পা দুলিয়ে বসে আছি।  আমার পায়ের নিচের দিকটাতেই জোয়ারের পানি আছড়ে পড়ছে কিছুক্ষণ পরপর। আমার ঠিক সামনেই বিস্তীর্ণ ফালি ফালি জোছনা।  চকমক করা সাগরের পানি,  তার ওপর ঝকঝকে আকাশে ধবধবে সাদা চাঁদে সাগরের যতদূর চোখ যায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ঝিকমিক করা নোনতা জলরাশি।

 

ফালি ফালি নোনতা জোছনা বয়ে বয়ে যাচ্ছে।  চারপাশে এত সুনসান নরম আলো!  আমার পাশেই,  হাত পাঁচেক দূরে একটা নেড়িকুত্তা রেলিংয়ে তার সামনের দিকে পা দুইটা তুলে দিয়েছে। রেলিংয়ের তিন সাড়ি পিলারের দুই নম্বর সাড়ি পর্যন্ত পা তুলতে সক্ষম হয়েছে সে। এই দুই আর তিন নম্বর রেলিং এর মাঝখান দিয়েই মাথা গলিয়ে দিয়েছে।  একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার সাগরের দিকে মুখ ফিরালো।একটু কি মুচকি হাসলো? বোধহয় হয়। মনে মনে কি  এটা বলল যে-  এ জোছনা তোমার যেমন,  আমারও তেমন!  বোধহয় বলল।  সে যাই হোক.. আমরা দুইজন অপার্থিব সৌন্দর্যের মাঝে  ডুবে যেতে লাগলাম।  আমাদের গ্রাস করতে লাগলো ফালি ফালি জোছনা।  সৌন্দর্য্য গিলতে  থাকলাম।

 

মুহূর্ত ২.  স্বপ্ন রাজ্যে চলে এসেছি। আসলেই। স্বপ্নরাজ্যে। 

 

খুব ছোট্টবেলায় যখন নিষ্পাপ সব স্বপ্নেরা ভিড় করতো নিষ্পাপ আমার মন জুড়ে তখন এক স্বপ্ন পেঁজো তুলোর মেঘের মতো আমার ভাবনার আকাশে ভিড় করলো।  স্বপ্নটা ছিল এই-  অনেক যখন বড় হবো,  অনেক যখন টাকা হবে তখন মনের মত এক প্রাসাদ বানাবো।  প্রাসাদটা রাজা-বাদশাহদের প্রাসাদের মতো চার দেয়ালে বন্দি হবে না।  হবে খোলামেলা,  প্রাকৃতিক। 

 সেখানে আর যা-ই থাকুক না কেন আমার একটা দিঘি থাকবেই থাকবে। দিঘির মাঝে ছোট্ট একটা দ্বীপ থাকবে।  ঐ দ্বীপে যাওয়ার জন্য তো একটা রাস্তা চাই।  গোল করে  বানানো কাঠের একটা ব্রিজ  হবে সে রাস্তা। ব্রিজ এ করে সেই ছোট্ট দ্বীপে  যাব আমি,  আব্বু, আম্মু আর আপু। তারপর সেই দ্বীপের নরম ঘাসে  বসে পড়বো আমরা।  আকাশে থাকবে নরম চাঁদের আলো।  চারদিকে সব পরিষ্কার দেখা যাবে চাঁদের আলোয়। পরীক্ষা নেই, ঘুমনোর তাড়া নেই। শুধুই আব্বুর কাছে গল্প শোনার পালা। আর একরাশ হাসি মাখা মুখ।

READ MORE:   নিজ পরিচয় গড়ো নারী - কবিতা

 

আশ্চর্য তো!  নুহাশ পল্লীতে আমার স্বপ্নের  সেই ছোট্ট  দ্বীপ কোথা থেকে এলো? দিঘির মাঝের সেই ছোট্ট দ্বীপ। দ্বীপে যাওয়ার জন্য কাঠের সেই গোল করে বানানো ব্রিজ ও তো আছে দেখি! যেখানে আব্বু, আম্মু আর আপুর সাথে আমার বসে গল্প করার কথা বড় হলে, অনেক টাকা হলে। এমন অদ্ভুত কেন সব? আমার ছোট্ট বেলার সেই স্বপ্নটা কিভাবে চুরি করে ফেললেন হুমায়ূন আহমেদ?!

চলবে..