প্রবন্ধসাহিত্য

অনুভূতি

পৃথিবীতে সবাই আমরা সম্পর্কের বেড়াজালে আবদ্ধ।সব সম্পর্ক গুলাতেই ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মায়া লুকিয়ে থাকে।আর এই মায়ার জন্ম হয় অনুভূতি থেকে। সম্পর্কগুলো অনুভূতির পরিচালনাধীন থাকে।

সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এগুলো আবার অনেক ধরনের হয়ে থাকে।যেমন, কোনো মানুষদের সাথে আমাদের সম্পর্ক টা যদি খুব ভালো থাকে আর তাদের সাথে সম্পর্কে একে অপরের প্রতি সন্মানবোধ টাও ঠিক থাকে,তখন আমাদের ছোট ছোট ভুল ত্রুটি গুলো তারা ধরবে না বা তাদের চোখে ধরা পরবে না।তখন আমাদের পার্সোনালিটি টা তাদের কাছে উচ্চ পদে থাকতেই পারে,আবার নাও থাকতে পারে।ধরে নিলাম আছে!
তবে সেই সম্পর্কটাই যদি কাল ক্রমে খারাপ হতে থাকে বা হয়ে যায় তখন আমাদের ছোট ছোট ভুল ত্রুটিগুলোই তাদের চোখে পাহাড় সমান হয়ে ধরা দিবে।যে ব্যাপার গুলা আগে তাদের চোখেই পড়তো না সেগুলাই শুল হয়ে চোখে ফোটার মতো অবস্থা।
আর সেই সাথে যদি সম্পর্ক টা টিকিয়ে রাখতে বা ভালো রাখতে আপরা অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যাই নিজেকে কিছু টা ছোট করে হলেও। তখন আর এই ছোট ছোট অনুভূতি নামের ভুল গুলা ছোট থাকবে না। সেগুলা আমাদের পার্সোনালিটি মাপক যন্ত্রের ফুয়েল এ পরিনত হবে।তখন সেই ফুয়েল আমরা যতো ব্যাবহার করবো সম্পর্ক টা ভালো রাখার জন্য, তাদের কাছে আমাদের জাইগা টা আসলে ততোটায় খারাপ হতে থাকে।আর সময়ের সাথে সাথে পার্সোনালিটির বিচারে আমাদের নাম দেওয়া হয় “ছ্যাচড়া উইত লেম পার্সোনালিটি।

আসলে আমাদের কার্যকলাপ কারো কাছে ভালো লাগা খারাপ লাগার ব্যাপার গুলো অনেকটা এটার উপর ও নির্ভর করে যে সে তার মস্তিষ্কে আগে থেকে আমাদের কেমন প্রতিচ্ছবি তৈরি করে রেখেছে।

পৃথিবীতে অভিনয় সবাই করে।
কেও নিজেকে ভালো রাখার পক্ষে,
আর কেও বা অন্যের ভালোর লক্ষে,

আসলে প্রকৃত অর্থে ব্যাস্ত কেও ই না। যাদের ভালো লাগে তারা থেকে যায় আর যাদের বিরক্তি লাগে তারা চলে যায়।ব্যাস্ততা নিহাতই এক অজুহাত মাত্র।

READ MORE:  আব্দুল হাই মােহাম্মাদ সাইফুল্লাহ জীবনী | Biography of Abdul Hai Muhammad Saifullah

অনেক সময় দেখা যায় আমরা নিজেদের অনুভুতি অনুযায়ী অন্যদের সাথে বিহেভ করি।এটা ভাবি না যে আমরা যেভাবে তাদের কে নিয়ে ভাবছি ঠিক সেভাবে তারাও ভাবছে তো!নাকি তাদের ভাবনার শহরে আমরা ঢুকতেই পারিনি।এখানে পরিষ্কার  ভাবে গুরুত্বের ব্যাপার টা চলে আসে।আমাদের অনুভুতির জগতে তারা যতটা গুরুত্বপূর্ণ আমরাও তাদের অনুভূতিতে এতো টায় গুরুত্বপূর্ণ তো?
যখনই দু-পক্ষের অনুভুতির মাঝে যোজন-যোজন দুরত্ব দেখা দেয় তখন সম্পর্ক গুলা অবহেলা নামক যন্ত্রনাজালে আবদ্ধ হয়ে পরে।
নিজেদের অনুভুতিতে তারা কেমন এটা ভাবার চেয়ে তাদের অনুভূতিতে আমরা কেমন সেটা বোঝা এবং তাদের সাথে সেই অনুযায়ী আচরন করাটায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যার ফলে আমাদের অনুভূতির জগতে অবহেলা নামক ঝড়টা কখনোই নাড়া দিবে না।

আমাদের এটা বোঝা উচিত, সম্পর্ক টা ঠিক হওয়ার হইলে এমনিও হবে যদি ও প্রচেষ্টা থাকা দরকার।তবে সেটা ঠিক করতে গিয়ে দিন শেষে নিজেদের কে ছোট করা বা আপাত দৃষ্টিতে ছ্যাচড়া নামক পদবি নেওয়ার মতো কাজ করাটা উচিত না।আমরা যদি সৎ থাকি আর সম্পর্ক টা যদি ঠিক হওয়ার ই থাকে তবে সেটা হবেই।তার জন্য ছ্যাচড়া উইত লেম পার্সোনালিটি পদবি নেওয়ার কোনো দরকার নাই। দিন শেষে আত্মসন্মাবোধ আর মজবুত ব্যাক্তিত্ব টায় নিজের থাকে। আর এগুলা ঠিক থাকলে সব কিছু আপনা আপনি ধরা দিবে।সেগুলার জন্য হা-হুতাশ করার কোনো প্রয়োজন নাই।

আমরা অনেকেই এটা ভাবি অনেক সময়, অনেক খারাপ সিচুয়েশনে, যে দেখি জীবন আমাদের কে কি দেয়।সময়ের অপেক্ষায় থেকে দেখি কি ফলাফল পাই।আমাদের এটা মাথায় রাখা উচিৎ জীবনকে জীবনের নিয়েমে চলতে দিতে হয় অনিয়মে নয়।অনিয়মে চলতে দিলে জীবন স্ব’ইচ্ছায় আসলে আমাদেরকে হতাশা ভর্তি একটা ঝুলি ছাড়া আর কিছুই দিবে না।
নিজের প্রচেষ্টার দ্বারা জীবন থেকে ভালো কিছু অর্জন করে নেওয়া উচিত।সেটা হোক কোনো একটা সম্পর্ক বিল্ড আপ বা অন্য কোনো গন্তব্যে পৌছনো। সময়, নিয়তি এগুলার আশায় থেমে যাওয়াটায় বরং বোকামি।

READ MORE:  একজন মুক্তিযোদ্ধা ও তার সহধর্মিণী

প্রকৃত অর্থে একটা মানুষের পক্ষে কখনোই সবাই কে খুশি করা বা সবার মন জুগিয়ে চলে সম্ভব নয়।তবে এক দিক থেকে খুশি কিন্তু সবাই হয়। কেও খুশি হয় আমাদের উপস্থিতিতে আবার কেও বা অনুপস্থিতিতে।যাদের আসলে খুশি হওয়ার তারা শুধু মাত্র আমাদের উপস্থিতিতেও অধিক খুশি থাকবে। আমাদের ছোট্ট ছোট্ট প্রচেষ্টা গুলোই তাদেরকে খুশির জোয়ারে ভাসিয়ে রাখবে।আর যাদের খুশি না হওয়ার বা যাদের কাছে আমাদের অনুভূতির মূল্য নাই তাদের কে আকাশের চাঁদটা ধরে এনে দিলেও তারা খুশি হতে পারবে না।তাই এদের খুশি করতে না গিয়ে আমাদের অনুভূতির গুলো যাদের কাছে মূল্যবান সম্পদ তাদের কে বোঝার চেষ্টা করা উচিত।তাহলে হয় তো অনুভূতি নষ্টের হার টা কমে আসবে।

যেগুলো আমাদের জন্য নিষিদ্ধ বা পাওয়া সম্ভব না, অনেক সময় আমরা সেগুলার পিছনে ছুটতে গিয়ে অনুভূতি গুলা মূলহীন করে তুলি। যার ফলে  যা আছে আমাদের তার আনন্দ টা উপভোগ করতে ভুলে যায়। আর দিন শেষে না পাওয়ার সমীকরণের হিসাব মিলায়।সেই সাথে নিজেদের অ’সুখি ভাবি। তবে সত্তিকার অর্থে আমরা অনুভুতিগুলা সঠিক জায়গায় খরচা করি না।তাই পোড়া পোড়া গন্ধ পায়। আমাদের যা কিছু আছে তা সুখে থাকার জন্য যথেষ্ট। আর এটাই আমাদের খুজে নিয়ে নিজেদের অনুভুতি গুলো আগে নিজেদের কাছে মূল্যবান করে তোলা উচিত।

মানুষের অনুভূতি গুলোর মূল্য অপর একজনের কাছে না থাকার একটা অন্যতম কারন হলো মানুষ মানুষের ভালো গুন গুলো, উপকার গুলো ভুলে যায়।মনে রাখে শুধু তার করা ছোট্ট ছোট্ট ভুল ত্রুটিগুলো।যার ফলে আমরা ভালো সম্পর্ক গুলোও সময়ের সাথে অব্যাক্ত অনুভুতির কাঠগড়ায় দাড়িয়ে হারিয়ে ফেলি।মানুষের খারাপ গুন গুলো বা তাদের করা ছোট্ট ভুল গুলো কে বার বার রিভাইস না করে তাদের ভালো গুন গুলোকে, তাদের উপকার গুলোকে রিভাইস করতে শিখে গেলেই আমাদের অনুভুতিগুলা পরিপূর্ণতার চূড়ায় পৌছাবে।

READ MORE:  রফিকুল ইসলাম মাদানী জীবনী | Biography of Rafiqul Islam Madani
আমরা কষ্টে আছি এটা কাওকে বোঝাতে চেষ্টা করলে দেখা যাবে আমাদের কষ্টগুলা বোঝার জন্য বা সময় নিয়ে আমাদের গল্পটা শুনবে এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে।তবে আমরা সুখে আছি এটা কোনো ভাবে একটু বুঝিয়ে দেখি। তখন আমাদের সুখের জীবন কষ্টে পরিনত হোক, এটা দেখার জন্য বিনা নিমন্ত্রন এ হাজারও মানুষের লাইন পরে যাবে। এটাই বাস্তবতা।

নিজেদের অনুভুতি গুলোকে আমরা নিজেরাই সঠিক মূলায়ন করি না।অথচ অন্যদের নিয়মিত দোষারোপ করে যায়।আমরা নিজেদের দোষগুলা চোখে ধরা পড়তে দিই না।
আমাদের উচিত নিজেদের সমস্যা গুলোও খুজে বের করা এবং সেগুলা কে যথাযত ভাবে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা।৷ তাহলেই আমাদের অনুভূতিগুলো পূর্ণতার দারপ্রান্তে গিয়ে পৌছবে।আর যদি নাও পৌছায় তবু ও অন্তত অপূর্ণতার সাথে সন্ধি গড়ে তুলবে না।

লেখক,
বিশ্বজিৎ ঘোষ
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *