Problem Solved? - ছোটগল্প
১৮/১৯ বছরের একটা ছেলে আবিদ।ভালােবাসার এক বন্ধনে বাধা আবিদ আর আনিকার মধ্যকার বন্ধন যেন আজ যাচ্ছে ছিড়ে। কারন, আজ তার (আনিকার) বিয়ে! কান্নাভরা চোখ নিয়ে বাসায় আসে ছেলেটি।এ সময় তার রুটিনে ছিলাে একটা টিউশনি।“আজ হঠাৎ ছেলেটা এ সময় বাসায়!” প্রশ্নটি মায়ের মাথায় আসে।আবিদের রুমে যায় তার মা। -বাবা আজ টিউশনিতে যাবি না? -না মা! আজ শরীরটা ভালাে লাগছে না। ঘুমাবাে। -আচ্ছা বাবা। শরীর বেশি খারাপ হলে ডাক দিস। কেমন? -ঠিক আছে মা। মা চলে গেল রুম থেকে। আবিদ ঘুমের টেবলেটের পাতা থেকে পরপর দু‘টি টেবলেট খুলে খেয়ে নিলাে। ঘুমালাে এশার আজান পর্যন্ত।আজান শুনে উঠে নিরিবিলি বসেই আছে ছেলেটি। রাত তখন (৯.৩০) সাড়ে নয়টার আশপাশ হবে। আবিদের মা ডাক দিলাে।মা‘য়ের ডাক শুনে নিচে গেল। ডিনার করলাে। - বাবা শরীরটা কেমন লাগছে এখন? -ভালাে মা। মাথাটা একটু ব্যথা করছে। -খেয়ে যাওয়ার সময় আমার রুমের উপরে রাখা ঔষধের বাটিটা থেকে একটা নাপা খেয়ে যাস। -ঠিক আছে মা! মায়ের কথানুসারে ঔষধ খেয়ে রুমে যায় আবিদ। ঘুমানাের জন্য লাইট বন্ধ করে শুয়ে থাকে। কিন্তু ঘুম আসছে না আবিদের। লাইট জালায় সে। তার থেকে থাকা ঘুমের ঔষধের পাতা বের করে ড্রয়ের থেকে। দু‘টি ঔষধ খুলেও ফেলে। মুখে নেওয়ার আগেই নিজে নিজেই বলে উঠে। “এমনিতেই তাে দু‘টি খেলাম বিকেলে। এখন খাওয়াটা ঠিক হবে না“। এটা বলেই ছিড়ে ফেলা টেবলেট দু‘টি ফেলে দেয় ডাস্টবিনে।
শুয়ে থাকে। এখন যে আর ছেলেটির চোখে ঘুম নেই। পরিবেশ তখন নিরিবিলি, পুরােই শান্ত। মাথায় এসে পড়তে শুরু করলাে সেই সব পুরাতন স্মৃতি! স্মৃতিগুচ্ছ ভেসে উঠছিলাে তার বন্ধ চোখের পাতা গুলােতে মনে হচ্ছে “ভালােবাসা কি এতােই হালকা?” ভাবলাে আবিদ সে তাে হারিয়ে এসেছে তার সবথেকে বড় সুঃখ। এখন কি তার জীবনের মূল্য আছে?এ জীবন রেখেই কি হবে? তার সেই(আনিকা) যে নেই এখন তার পাশে!“। সকাল হলাে! তার মা রুমে এসে দেখে পাখার মধ্যে ঝুলন্ত তার(মায়ের) একটি কাপড়,আর সেই কাপরের নিচ অংশে ঝুলে রয়েছে তারই একমাত্র আদরের সন্তান আবিদ! চিৎকার দিয়েই জ্ঞান হারায় মা! পাশের বাসার সবাই চিৎকার শুনে আসে। আবিদের মা‘র জ্ঞান আসে। সবাই শান্তনা দিতে থাকে আবিদের মা‘কে।
আবিদের ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছিলাে আরেকটি জীবন। সে এখন দেখতে পারছে সব, দেখছে তার মায়ের সন্তানহারা কান্না দেখে খারাপ লাগছিলাে আবিদের। কারন সে যে ভেবেছিলাে মেয়েটিকে ছাড়া আসলেই কি তার কোন মূল্যই নেই। এখন কিছুটা বুজতে পাড়ছে। প্রতিবেশিদের নিজেদের তৈরী নানা গল্প বলছে একজন আরেকজনকে। এমন এমন গল্প শুনে এ অবস্থাতেও হাসিটা থামিয়ে রাখতে পারে নি আবিদ।হসি মুখ নিয়েও যখনই মায়ের দিকে তাকায় তখনই তার যেন কষ্ট বড়তেই থাকে। এমন সময় আত্মীয়দের একজন বলে উঠে “কবরের ব্যবস্থা তাে করতে হবে,সময় নষ্ট করে লাভ কি?”
আবিদের মা কথাটি শুনে যেন একদম চুপ হয়ে গেলেন। তখনই আবিদের খালামনি বলে উঠলাে “কবর এখন দেওয়া যাবে না, আবিদের খালতাে ভাইয়ারা বিদেশ থেকে আসবেন,আসতে ভাের হবে“। আর অন্যদিকে আসে পুলিশ। নিয়ে যায় পােসমেটাম করানাের জন্য। আবিদ সবকিছুতেই কেবল নিরিবিলি দর্শক মাত্র। কি করবে? তার হাতে যে এখন কিছুই নেই। যখন ছিলাে সব সমস্যার সমাধান ভেবে দেওয়ালে সত্যাটাকে ঝুলিয়ে দিয়েছিলাে। হঠাৎ আবিদ ভাবলাে যার জন্য এই নির্মম সিদ্ধান্ত তার খবরটা একটু নেওয়া দরকার। যদিও আবিদ জানতাে আনিকা এমনিতেও অনেক দূঃখেই আছে তার উপর যখন জানবে আত্মহত্যা করছে তার সবথেকে প্রিয় মানুষটি....? কি হবে আনিকার? এগুলাে চিন্তা করতে থাকে আবিদ। যায়। আনিকার বাসরে। আনিকা বসে আছে, মুখে হালকা হাসি নিয়ে চারােদিক ঘুরে দেখছে গােটাটা রুম।আনিকার বান্ধবি এসে বাইরে হালকা কাশি দেয়।
বন্ধু আয়, আসে নি তাের ভাইয়া এখনাে। -কোন খবর শুনছােস দোস্ত? -কি খবর? আমার জামাইটার কিছু হলাে টোলাে নাকি? -আরে না! তাের বয়ফ্রেন্ড আছে না? আরে ওই আবিদ নামের ছেলেটা?
-হ্যাঁ,কোন জামেলা করছে নাকি। আমি গিয়ে সামলাবাে? -আরে নারে বাবা। ওই ছেলেটা শুনলাম আত্মহত্যা করেছে। -কি! সত্যি? তুই সিউর? -আরে হ্যাঁ। একটু আগে আমাদের রাকিবে ফোন দিয়ে বললাে। তুই মন খারাপ করবি নাতাে আবার? (কিছুক্ষন চুপচাপ গােটা রুম। আবিদও অপেক্ষা করছে উত্তরের।)। -ওয়াও বস! আলহামদুলিল্লাহ দোস্ত। মিষ্টি পাইবি দু‘টা শুভ কাজের মিষ্টি এক সাথে পাবি। (আশ্চয্য হয়ে তাকিয়ে তখন আবিদ আর আনিকার বান্ধবি)। -কি বলস দোস্ত? তাের আবিদের কথা বলছি আমি।। -ধুরু আমার বা*। ওই পােলায় মরছে ভালাে হইছে। আমি তাে চিন্তায় ছিলাম, যে পরিমানে ভালােবাসে আমারে, আমার জামাইটার থেকে আবার গিরিঙ্গি লাগিয়ে দেয় নাকি। যাক! তুই জানস আমাদের কত পুরােন ছবি আছে আবিদের থেকে।আমি যে কত খুশি হইছি তােরে বলে বুঝানাে যাবে না। যা আমার তরফ থেকে ডাবল ট্রিট।
আবিদ নিস্তব্ধ। বিশ্বাস হচ্ছে না আবিদের, ভুল স্বপ্নে ডুকে যায় নি তাে আবিদ?এমনই কিছু চিন্তা তার মনে। তার এ শরীরের চোখ দু‘টি থেকে গরিয়ে পড়ছে কিছু ফোটা পানি। যদিও সেটা দেখার সাধ্য নেই আমার, আপনার, বান্ধবীর কিবা সেই বেঈমান আনিকারও। -আরে ভাইয়া। আসেন, আমি চলে যাচ্ছি (আনিকার স্বামীকে উদ্দেশ্য করে আনিকার বান্ধবী) বেরিয়ে যায় আবিদ। বুজতে বাকি নেই এখন আর আবিদের যে সে ঠিক কত বড় একটা ভুল করেছিলাে। যার ভালােবাসা না পেয়ে তার আজ এ দশা সেই মেয়েটি যে ঠিকই আজ কাটাচ্ছে বাসর। গেল বাসায় এখন মায়ের কান্নায় কান্না করছে আবিদ নিজেও। চিৎকার করে বলছে “মা কেঁদো না,আমি এইতাে আছি, আমায় দেখ মা“। কিন্তু এ চিৎকার যে কারাের শােনার সাধ্যি নেই।মায়ের কান্নাও থামে না আর আবিদের....? ভাের তখন ৫.০০ টা।আশেপাশে থাকা লােকের বিভিন্ন কথা সরবারহ হচ্ছে এক জন থেকে অন্যেতে। সে সময়ও আবিদ তার সামনেই বসা আর বলছে “কেনই বা করেছি এমন?,কেন মৃত্যুর আগে একবারটি চোখে ভেসে আসেনি মায়ের মুখ। একবার আসলেও যে এমন সিদ্ধান্ত হয়তাে বা নাও নিতে পারতাম“।
সকাল ৮.০০টা। জানাজার জন্য নিয়ে যায় আবিদের মৃত দেহকে। পরিবারের কিছু লােক প্রচুর কান্না করছিলাে তখন। সে এগুলাে এড়িয়ে গিয়ে দাড়ায় এক নিরিবিলি যায়গায়।ফোনেই কথা বলতে বলতে সেখানে আসে তার খালাতাে ভাই। -এই পরিবারের জন্য কি না করেছি?এদের দু‘জনকে এতােগুলি বছর ধরে নিজের টাকায় চালিয়েছি,এ প্ল্যাট,খাবার দাবার,জামা কাপর, কোন কিছু অভাব পেতে দেইনি। হয়তাে ইদানিং আবিদ কিছু টিউশনি করায় সেই কারনে টাকা পয়সা তেমন নেয় নি কিন্তু তার আগে?
আমার আংকেলের উইলে ছিলাে আবিদের ২১ বছর হলে প্রায় ১০কোটি টাকার মালিক হবে আবিদ নিজে। ভেবেছিলাম আবিদ বড় হােক তাদের ১/২ কোটি টাকা দিলেই তারা শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারবে গােটা জীবন আর বাকি টাকাগুলাে আমি আমার কোম্পানিতে ইনভেস্ট করবাে। কিন্তু এখন যে সব চলে গেল! এখন এ বুড়িটাকে ক্যারি করতে হবে আজীবন। আর পাবােটা কি?N o thin g! Nothing!“।
আবিদ তখন নিজেকেই নিজে ঘৃনা করতে শুরু করলাে। তার এতাে আপন ভাইয়ের এ স্বার্থপর রুপ দেখে। আর অন্যদিকে তার মা যে কিনা নিজেই একজন বিলেনিয়ার তাকে থাকতে হবে অন্যের দয়াতে?
আবিদ তখন চিৎকার করে চাচ্ছিল আরেকটি সুযােগ।কিন্তু নিজের এক এক করে চলে যাচ্ছিলাে সমস্ত অঙ্গ।মায়ের দিকে হাত বাড়িয়েই চিৎকার কণ্ঠে গায়েব হতে হয় আবিদকে। কারন ততােক্ষণে হয়ে গিয়েছিলাে তার জানাজা। হয়তাে এ সুযােগে আবিদ হতে পারতাে একজন আদর্শ সন্তান,আদর্শ মানুষ,আর চিনা লােকদের করতে পারতাে সায়েস্তা, কিন্তু এটা যে প্রকৃতির বিপক্ষে। তাই বা হয় কিভাবে?
লেখক,
আব্দুল্লাহ আল নােমান
হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।