ছোট গল্পসাহিত্য

স্বাধীন আবাস (১ম অংশ)

একটা ঘর। শোবার একটা ঘর। এতও সুন্দর হওয়া সম্ভব? সবার প্রথমে যে জিনিসটা মেঘা খেয়াল করলো তা হল ঘরময় আলো। প্রচুর  আলো। ঘরের এখানে সেখানে অনেকগুলো জানালা এ প্রচুর আলোর উৎস। 

ঘরের  কোণার দরজা দিয়ে ঢুকতেই মেঘা তার দুই পাশ দিয়ে উঠে যাওয়া সিঁড়ি দেখতে পেল। শোবার ঘরে সিঁড়ি! কেমন অদ্ভুত না? এমন সুন্দর লাগছে সিড়ি দুইটা! ঘরের দরজার ঠিক পরেই; ফ্লোর থেকে দুইটা সিঁড়ি দেয়াল ঘেঁষে উপর দিকে কিছুদূর উঠতে গিয়ে হঠাৎ যেন থমকে গিয়েছে। মানে, ঘরের ছাদ পর্যন্ত যাওয়ার আগেই সিড়ি শেষ হয়ে গিয়েছে। মাঝ দেয়াল পর্যন্ত।

 

সিড়ি জুড়ে এখানে-সেখানে বাচ্চাকাচ্চা। হাতে হাতে বই। সিঁড়ির ধাপে ধাপে বসে গম্ভীরমুখে বই পড়ছে। সিড়ি যে দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে গিয়েছে সে দেয়ালের মাঝে মাঝে কেমন খোপ খোপ পাখির বাসার মত। ওইসব খোপ গুলোর মধ্যেও  বসে বই পড়ছে কেউ কেউ। আর সিঁড়ি যেখানটায় গিয়ে শেষ হয়েছে সেখানে ওই উপর টাতেই মস্ত বড় এক জানালা। জানালার এ পাশটাতে টেবিল ল্যাম্প সহ একটি করে টেবিল রাখা আছে। সেই টেবিলে বসে পড়ছে আরো কতগুলো বাচ্চা। দুই সিঁড়িতে এত এত বাচ্চা এখানে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এমনভাবে আছে যেন মনে হচ্ছে হাজার হাজার বাচ্চা বই এর দুনিয়ায় ডুবে গিয়েছে। মেঘার মনটাই ভালো হয়ে গেল।

 

আসলে যে কারো মন ভালো হয়ে যাওয়ার রসদ এ সাড়া ঘর জুড়েই রয়েছে। মেঝের সম্পূর্ণটাই কার্পেটে মোড়ানো ঘরের এখানে সেখানেও মনে হচ্ছে হাজার হাজার বাচ্চা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কিলবিল করছে! এমনিতে সম্পূর্ণ ঘরটাই যেন জানালা। জানালা ছাড়া দেয়াল খুব কম জায়গা জুড়েই রয়েছে। জানালার এ পাশ ও পাশ দিয়ে একটু আধটু  দেয়াল। দেয়ালের জন্য বরাদ্দ আরেকটি জায়গা অবশ্য আছে। তা হচ্ছে ঘরের ছাদ। ঘরের ছাদে নিশ্চয়ই জানালা লাগানো যাবেনা? যদি লাগানো যেত তাহলে বোধহয় এই ঘরের ছাদেও জানালা লাগানো থাকত। বাচ্চাদের মধ্যে কয়েকটা বাচ্চা কি দেয়াল ধরে স্পাইডারম্যানের মতো ছাদের ঐ উপর পর্যন্ত উঠে গিয়েছে? ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই। ঘরের ছাদ অব্দি  উঠা যায়  এমন কয়েকটা মই ঘরের চারপাশে দেয়ালের সাথে রাখা আছে। সেই সব মই বেয়ে কেউ কেউ দেয়ালের অনেকটা উপর পর্যন্ত আবার কেউ কেউ একদম ছাদ পর্যন্ত  উঠে গিয়েছে।

 

মই বেয়ে উঠা বাচ্চাগুলা ও যারা ঘরের  সবগুলো দেয়ালজুড়ে কিলবিল করছে এদের একটা আলাদা বিশেষত্ব আছে। এরা দেয়ালজুড়ে ইচ্ছা মত দেগাচ্ছে। কেউ ১ ২, ক খ, A B C D  লিখছে, কেউবা কাঁচা হাতে আঁকা বাঁকা ঘর বা গাছ লতাপাতা আঁকছে, আবার কেউ কেউ শুধুই মনের মাধুরী মিশিয়ে  দাগাচ্ছে। এক এক করে দেখলে এসব নিছক হাবিজাবি মনে হবে কিন্তু মেঘা যখন এক একটা দেয়াল সবটা একবারে  একটা দেয়াল হিসেবে দেখল তখন তার সমগ্র দেয়ালটাকে পৃথিবীর বাইরের রহস্যময় ভিন্ন এক জগত বলে মনে হলো। চারদিকের রহস্যময়- জগত দেখতে দেখতে মেঘা খেয়াল করল ঘরে আরো একটা সিঁড়ি আছে। সরু সেই সিড়ি কেমন এঁকেবেঁকে উঠে গিয়েছে কিছুদূর। তারপর কোথায় যেন উধাও হয়ে গিয়েছে। কেমন রহস্যময়।

    ‘ রহস্য সর্বদা হাতছানিয়া ডাকে।’ 

নরম ঘাসের মতো কার্পেট মাড়িয়ে সেই রহস্যময় সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হল মেঘা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link