ছোট গল্পসাহিত্য

শিউলি ফুল

আগামি সপ্তাহে আমার বিয়ে।

আমি শিউলি। ছোট্ট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল আব্বার ছোট্ট বেলার বন্ধু আমজাদ চাচার ছেলেকে বিয়ে করার। কিন্তু দুর্ভাগ্য বসত বিয়েটা তার সাথে হচ্ছেনা। আব্বার বন্ধুর ছেলেকে আমি কখনোও দেখেনি। ছোট্টবেলা থেকেই শুনে এসেছি, বড় হলে আমাকে নাকি তার সাথে বিয়ে দেওয়া হবে। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই তাকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগত। হয়ত ভালোও বেসে ফেলেছিলাম। প্রতিবেশি মজিদ চাচার আনা প্রস্তাবে বিয়েটা হচ্ছে। বিয়েতে আমার এতটুকু মত নেই। কিন্তু আমার মতামতের কিই বা মূল্য আছে। তবুও আব্বা আমাকে আমার মতামতের কথা জানতে চাওয়ায় আট দশটা মেয়ের মতো আমিও বললাম, আপনাদের পচন্দই আমার পচন্দ, আপনারা যা ভালো মনে করেন। খুব বলতে ইচ্ছা করেছিল, একজনের সঙ্গে বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে অন্য জনের সঙ্গে বিয়ে দিবে কেন। আমি এ বিয়েতে মত দিতে পারছি না। বিয়ে করলে আমজাদ চাচার ছেলে, আরিফকেই করব। কথাগুলো মনের ভিতরই রয়ে গেল। বলা হলো না। বলার মতো সত্ সাহসও আমার নেই। মজিদ চাচার আনা প্রস্তাবের ছেলেকেও আমি দেখিনি। আব্বা চাচারা দেখেছেন। ছেলে নাকি খুব ভালো। নিজের ব্যাবসা। দেখতে সুন্দর। আমার চেয়েও সুন্দর। চাচাতো বোনেদের কাছ থেকে শুনেছি। যাই হোক, আমার একদমই মতামত নেই এ বিয়েতে। 

বিয়েটা আমি করতে চাচ্ছি না। আবার নাও করতে পারছি না। আর আমার না করাতে কারও কোন কিছু যায় আসে না। আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকী। বিয়ে নিয়ে প্রতিটা মানুষের একটা অন্য রখম স্বপ্ন থাকে। কারোও পুরন হয়, কারোও হয় না। আমার স্বপ্নটা নাইবা পুরন হলো। সব স্বপ্নের পুর্ণতা থাকতে হবে এমন তো নয়। এখন আমি চাইনা আমজাদ চাচার ছেলে এই বিয়েতে আসুক। আমজাদ চাচার উপস্থিতি আমি এখন থেকেই বিরক্তির সঙ্গে নিচ্ছি। 

আর মাত্র ৬ দিন বাকি। গতকাল কাপর-চোপর কেনা হয়ে গেছে। আজ হঠাৎ করেই আব্বা ছেলেপক্ষকে না করে দিল। ছেলে নাকি ভালো না। মদ-টদ খায়। হঠাৎ করে বিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার খুশিতো ধরে রাখতে পারি না। তাড়াতাড়ি করে আল্লাহর শুকুর আদায়ে সিজদা করলাম এবং মনে প্রানে দোয়া করলাম, আমজাদ চাচার ছেলে আরিফের সাথেই যেন বিয়েটা হয়।

কি কারনে বিয়েটা ভেঙ্গেছে জানি না। আর জানতেও চাই না। এই বিয়ে ভাঙ্গায় আব্বা খুবই চিন্তিত ছিলেন। যেভাবেই হোক এই শুক্রবার বিয়েটা হতেই হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মতো লগ্নভ্রষ্ট হওয়া যাবে না। আল্লাহর অশেষ রহমতে আম্মা আব্বাকে যুক্তি দিলেন, আমজাদ চাচার ছেলের ব্যাপারে। মেয়ের মনের অবস্থা একমাত্র মা ই বুঝতে পারে। এই প্রথম এর প্রমান পেলাম। ভেঙ্গে যাওয়া বিয়েতে আমজাদ চাচার অবদান ছিল খুবই। বিয়ের শুরু থেকেই আমজাদ চাচা বিভিন্ন বিষয়ে আব্বাকে সাহায্য করেছেন। উনার ব্যবহারে মনে হয়েছে, উনার নিজের মেয়েরই বিয়েটা হচ্ছে। আম্মার কথায় আব্বা চাচাকে প্রস্তাবটা দিলেন। আব্বা ভীষন চিন্তিত ছিলেন। সকল চিন্তার অবসান ঘটিয়ে চাচা তার ছেলের সাথে বিয়ে দিবেন বলে আশ্বস্ত করলেন। আমার খুশি দেখে কে? আবারোও সেজদা করলাম। 

কনে সেজে বধু বেশে আমার ঘরে বসে আছি। বরযাত্রিরা এখনোও আসে নি। অপেক্ষা কী সেটা ছোট্ট থেকে বড় হয়েছি কোনদিনই আজকের মতো টের পাই নি। বুজতে শিখার পর থেকেই অদ্যাবদি আরিফের জন্য অপেক্ষা করেছি। আজকে প্রতিটা সেকেন্ডের কোটি ভাগের একভাগ সেকেন্ডকে অনুভব করছিলাম। সময় যেন এগুতেই চাচ্ছে না। ঘরভর্তি মেহমানদের আনাঘোনা। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দুপুরে আমজাদ চাচা তার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে এসেছেন। সবকিছু ঠিকঠাক মতো সম্পন্ন হলো। সমস্যা বাধলো, যখন আরিফকে নিয়ে সবাই আমার ঘরে এলো। যাকে এক পলক দেখার জন্য এত এত প্রতিক্ষা সেই আমার ঘরে, আমার সামনে। তাকে দেখা তো দুরের কথা, তার উপস্থিতিতে আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। যখন সে আমার পাশে এসে দাড়ালো, আমার চারপাশ ফ্যানের পাখার মতো ঘুড়তে লাগলো। আমি তার দিকে তাকাতে পারলাম না। তার দিকে না তাকিয়েই বিয়ে সম্পন্ন হলো। আব্বা আমার হাত আরিফের হাতে তুলে দিলেন। এটা ছিল আমার প্রথম স্পর্শ। তার প্রথম স্পর্শে শিহরিত হলাম। 

বিয়ের সকল কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর যখন আমাকে চলে যেতে হবে, বুক ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছিল। শত চেষ্টা করেও কান্না থামাতে পারি নি। আম্মাকে কতক্ষন জরিয়ে ধরেছিলাম, মনে নেই। আব্বাকে জরিয়ে ধরার পর, কিছুই মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরল, গাড়ি এসে আরিফদের বাড়ির সামনে দাড়াল। আমাদের বাড়ি থেকে আরিফদের বাড়ির দুরুত্ব গাড়িতে ১৫ মিনিটের। বুঝতে পারলাম আরিফের বুকে শুয়ে আছি। লজ্জায় আর নড়াচরা ও তার চোখের দিকে তাকানোর সাহস হলো না। তার বা হাত ছিল আমার বা কাধেঁ। হঠাত্ করেই তার ডান হাতটা আমার ঠোটঁ ফাক করে দাত ধরতে যাবে অমনি আমি নড়েচড়ে বসতে যাওয়ায় তার দুহাত সরিয়ে নিল। বোধহয় আমার মতো সেও লজ্জা পেয়েছে। এতক্ষনে গাড়ি তাদের বাড়িতে এসে দাড়িয়েছে। 

নতুন ঘর। নতুন মানুষ। নতুন এক নতুন আমি। পুরাতন একটা ঘরকে সামান্য কিছু ফুল দিয়ে সাজানো, সেই ঘরে বসা নতুন আমি। আরিফকে দেখার অনুভুতি আমার দম বন্ধ করে দিচ্ছে এখনই।

তবুও ভালবাসি বলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

Writer

MD Ekram Miah
Assistant Officer HR
Healthy Choice Food & Beverage Ltd. 
Isabpur, Sreemangal, Moulvibazar.
FacebookTwitter, LinkedIn

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link