ঘরোয়া পদ্ধতিতে দাঁতের ব্যথা কমানোর উপায় জেনে নিন

দাঁত এর ব্যথা এক অসহ্য যন্ত্রণার নাম। দাঁতে কিন্তু ব্যথা হয় না। ব্যথা হয় দাঁতের গোড়ায় অর্থাৎ মাড়িতে। কিছু উপায় জানা থাকলে খুব সহজেই এই দাঁত এর মাড়ির ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। বিভিন্ন কারণে এই ব্যথা হয়ে থাকে। সাধারণত দাঁত এর গোড়ার স্নায়ুতে  জ্বলন, দাঁতের ক্ষয়, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ,  আঘাত, দাঁত নষ্ট হওয়া ইত্যাদি কারণে দাঁত ব্যথা হতে পারে। কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে দাঁত এর মাড়ির ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। আসুন ঘরোয়া উপায়ে দাঁত এর মাড়ির ব্যথা দূর করার কিছু উপায় জেনে নিই। 

 

১. প্রথমে হালকা গরম পানি করে নিতে হবে। এরপর গরম পানিতে পরিষ্কার কাপড় চুবিয়ে  নিতে হবে। অতঃপর যেখানে দাঁতের মাড়িতে ব্যথা সেখানে গালের ওপর কাপড়টি স্পর্শ করে ধরে রাখতে হবে। এভাবে কিছুক্ষণ ধরে রাখতে হবে, তাহলে আরাম পাওয়া যাবে। 

এছাড়াও এ পদ্ধতিটি বরফ দিয়েও অবলম্বন করা যেতে পারে। কয়েকটি বরফ নিয়ে সেটি পরিষ্কার কাপড়ের মধ্যে নিয়ে যেখানে মাড়িতে ব্যথা সেখানে গালের ওপর ধরে রাখতে হবে। যে পর্যন্ত ব্যথা না কমেছে সে পর্যন্ত  এই কাজের পুনরাবৃত্তি করতে হবে। 

 

২. গরম পানিতে লবণ দিয়ে কুলি করা মাড়ির ব্যথা থেকে মুক্তির অন্যতম ভালো উপায়। প্রথমে পানি হালকা গরম করে নিতে হবে; খেয়াল রাখতে হবে পানি যেন ফোটা না শুরু করে। এরপর এক গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ লবণ যোগ করতে হবে। অতঃপর সেই পানি দিয়ে কুলি করতে হবে। গরম পানিতে লবণ দিয়ে কুলি করলে মুখের ব্যাকটেরিয়া গুলো দূর হয়। দিনে দুবার এই ভাবে গরম পানিতে লবণ সহকারে কুলি করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, আপনি যেন পানি গিলে না ফেলেন। 

 

৩. রসুনে রয়েছে এন্টিবায়োটিক উপাদান। একটু রসুন নিয়ে তাতে লবণ মাখিয়ে দাঁত এর যেখানে ব্যথা সেখানে চিবিয়ে ধরে রাখুন। এভাবে ব্যথা দূর হয়ে যাবে।  এছাড়া রসুন এর জায়গায় পেঁয়াজও ব্যবহার করতে পারেন। 

 

৪. হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দিয়ে কুলি করলে আপনার দাঁত এর মাড়ির ব্যথা অনেকাংশে কমে যেতে পারে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের ব্যবহার মুখের ভিতর ব্যাকটেরিয়ার বংশ বিস্তার করতে দেয় না। সমপরিমাণ পানির সাথে সমপরিমাণ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে মুখে নিয়ে ২০ সেকেণ্ড ধরে কুলি করুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ কুলি করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে এটি অনেক ভালো একটি উপায় হিসেবে পরিচিত। 

 

৫. আমরা সবাই তো বাসায় চা বানাই। বাজারে যে টি ব্যাগ গুলো কিনতে পাওয়া যায়, সেই টি ব্যাগ গুলো দিয়ে চা বানানোর পর সেটি ফেলে না দিয়ে ব্যবহার করে আপনি মাড়ির ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। টি ব্যাগটি নিয়ে হালকা করে ব্যথা করা মাড়ির ওপর ধরে রাখুন যে পর্যন্ত ব্যথা না কমে। খেয়াল রাখবেন টি ব্যাগটি যেন হালকা গরম থাকে। 

 

৬. চা গাছের তেল একটি ভালো উপশম। কারণ চা পাতার তেলে এমন উপাদান রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়াকে জারণ করতে দেয় না। ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তার প্রতিরোধ করে। চা পাতার তেল পানিতে মিশ্রিত করে কুলি করতে হবে। এছাড়া চা পাতার তেল সমৃদ্ধ টুথপেষ্ট ব্যবহার করেও উপকার পাওয়া যেতে পারে। 

 

৭. হলুদের পেস্ট ব্যবহার করে দাঁতের মাড়ির ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এরজন্য ৩-৪ চামচ হলুদ নিয়ে সামান্য পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। অতঃপর দাঁতের মাড়ির যেখানে ব্যথা সেখানে লাগিয়ে রাখুন ৫ মিনিট এর জন্য। এভাবে টানা ২ সপ্তাহ প্রতিদিন পেস্টটি ব্যবহার করলে মাড়ির ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 

 

৮. একটি স্প্রে করা যায় এমন ব্যবস্থাসম্পন্ন বোতল নিন। অতঃপর বোতলের মধ্যে পানির সাথে লবঙ্গ বা গোলমরিচের তেল যুক্ত করে মিশ্রিত করুন। এই মিশ্রণটি যখনি আপনার মাড়িতে ব্যথা করবে, সে স্থানে স্প্রে করুন। 

 

৯. পুষ্টিকর খাবারের কোনো বিকল্প নেই। পুষ্টিকর খাবার যাবতীয় রোগবালাই এর বিরুদ্ধে ঢালস্বরূপ। দাঁতের মাড়ির ব্যথা প্রতিহত করতে বেশি করে ভিটামিম সি, ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। মটরশুঁটি, মসুর ডাল, সবুজ শাক ইত্যাদি খাবারে ফলিক এসিড রয়েছে। আমলকি, পেয়ারা, কমলা, আনারস এসব ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। দুধ, ডিম, মাংস ইত্যাদি খাবার থেকে ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরণ হয়। ক্যালসিয়াম দাঁত ও মাড়ির গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

 

এসব ব্যবস্থা গ্রহণের পরও যদি দাঁতের মাড়ির ব্যথা ভালো না হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে এবং পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *