ইতিহাস

ইউসুফ জুলেখার কাহিনী | yusuf and zulaikha story

ইউসুফ জুলেখার কাহিনী (yusuf and zulaikha story) নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক গল্প, কবিতা,উপন্যাস, বানানো হয়েছে অনেক মুভি, সিরিয়াল। ইউসুফ জুলেখার কাহিনী (yusuf and zulaikha story) নিয়ে কেচ্ছা কাহিনী ছোটবেলায় শুনতে কি যে মজা লাগতো, তা কি আর বলে বোঝানো যাবে? বিশ্বাসও করতাম গল্পের ছলে বলা তাদের এই  প্রেম কাহিনী। মনে মনে শ্রদ্ধা ভক্তিও চলে আসতো তাদের প্রতি।

হযরত ইউসুফ (আ) কি সত্যিই জুলেখার সাথে প্রেম করেছিলেন কি? নাকি যুগের পর পর একজন নবীর নামে মিথ্যা বানোয়াট কেচ্ছা কাহিনি বানিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে। কোন আল্লহর ওলী কিংবা নবী রাসুলদের সম্পর্কে কোন গল্প কাহিনি শুনে তা যাচাই-বাছাই না করে আমাদের মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করা উচিত নয়। আজকে আমরা ইউসুফ জুলেখার কাহিনী (yusuf and zulaikha story) এর সত্যটা জানব ইনশাআল্লাহ। 

তৈমুস বাদশাহের কন্যা জুলেখা আজিজ মিশরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও ক্রীতদাস ইউসুফের প্রতি গভীর ভাবে প্রেমাসক্ত হন। নানাভাবে আকৃষ্ট করেও জুলেখা ইউসুফকে বশীভূত করতে পারেন নি। বহু ঘটনার মধ্য দিয়ে ইউসুফ মিশরের অধিপতি হন। ঘটনাক্রমে জোলেখা তখনও তার আকাঙ্খা পরিত্যাগ করেন নি এবং পরে ইউসুফের মনেরও পরিবর্তন ঘটে। ফলে তাদের মিলন হয়। কাব্যের এই প্রধান কাহিনীর সাথে আরও অসংখ্য উপকাহিনী স্থান পেয়েছে।

অনেকের মত:

অনেকের মতে জুলেখার স্বামী উজিরে আযমের মৃত্যুর পর ইউসুফ (আ) এর সাথেই তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর জুলেখার প্রতি হযরত ইউসুফ (আ) এর মহব্বত অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু ইউসুফ (আ) এর প্রতি জুলেখার মহব্বত কমে যায়। ইউসুফ (আ) এই ব্যাপারে জুলেখাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন যে, ইউসুফ (আ) এর মাধ্যমেই তিনি আল্লাহর মহব্বত লাভ করেছেন। আর আল্লাহর মহব্বতের কাছে অন্য সব মহব্বতই ম্লান হয়ে যায়।

প্রচলিত আরেকটি মত:

ইউসুফের প্রেমে জুলেখা পাগলিনীর মতো হয়ে গেলেন। হলেন বৃদ্ধাও! অতঃপর আল্লাহ একসময় তার প্রতি দয়াপরাবশ হন এবং তাকে তার রূপ যৌবন ফিরিয়ে দেন। তারপর জুলেখা স্রস্টার প্রেমেই মজলেন। ইবাদত বন্দীগিতে মনোনিবেশের কারনে ইউসুফের কথা অনেকটা ভুলেই গেলেন। একদিন ইউসুফই তার সান্নিধ্য লাভের জন্য প্রচেষ্টা চালালে জুলেখা তাকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ইউসুফের মতনই দৌড়ে পালাতে উদ্ধত হন এবং সময় চান আরও ১৪ বছর। তবে ১৪ বছর পর আর দেখা হয়নি ইউসুফ-জুলেখার।

এবার আসুন সত্য ঘটনাটা জেনে নেই

অন্যান্য নবীদের কাহিনী কুরআনের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজন অনুসারে বিক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত হলেও ইউসুফ নবীর ঘটনাবলী একত্রে সাজিয়ে একটি সূরাতে সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে। আর এর মধ্যে যেসব ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, তা যেমনি অলৌকিক, তেমনি চমকপ্রদ ও শিক্ষণীয়।
আর তা শৈশবে দেখা ইউসুফের একটি স্বপ্ন দিয়ে শুরু হয়েছে এবং তার সমাপ্তি ঘটেছে উক্ত স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে। মাঝখানের ২২/২৩ বছর মতান্তরে চল্লিশ বছর অনেকগুলি বিয়োগান্ত ও চমকপ্রদ ঘটনায় পূর্ণ। কাহিনী অনুযায়ী ইউসুফ শৈশবকালে স্বপ্ন দেখেন যে, ১১টি নক্ষত্র এবং সূর্য ও চন্দ্র তাকে সিজদা করছে। তিনি এই স্বপ্ন পিতা হযরত ইয়াকূবকে বললে তিনি তাকে সেটা গোপন রাখতে বলেন। কিন্তু তা ফাঁস হয়ে যায়। ফলে এটা তার সুন্দর ভবিষ্যতের হাতছানি ভেবে সৎ ভাইয়েরা হিংসায় জ্বলে ওঠে এবং তারা তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করে। অতঃপর তারা তাকে জঙ্গলের একটি পরিত্যক্ত অন্ধকূপে নিক্ষেপ করে। তিনদিন পরে পথহারা ব্যবসায়ী কাফেলার নিক্ষিপ্ত বালতিতে করে তিনি উপরে উঠে আসেন। পরে ঐ ব্যবসায়ীরা তাকে মিসরের রাজধানীতে বিক্রি করে দেয়। ভাগ্যক্রমে মিসরের অর্থ ও রাজস্ব মন্ত্রী ক্বিৎফীর (قطفير) তাকে খরিদ করে বাড়ীতে নিয়ে যান ক্রীতদাস হিসাবে। কয়েক বছরের মধ্যে যৌবনে পদার্পণকারী অনিন্দ্য সুন্দর ইউসুফের প্রতি মন্ত্রীর নিঃসন্তান স্ত্রী যুলায়খার আসক্তি জন্মে। ফলে শুরু হয় ইউসুফের জীবনে আরেক পরীক্ষা। একদিন যুলায়খা ইউসুফকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে কুপ্রস্তাব দেয়। তাতে ইউসুফ সম্মত না হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলে পিছন থেকে যুলায়খা তার জামা টেনে ধরলে তা ছিঁড়ে যায়। দরজা খুলে বেরিয়ে আসতেই দু’জনে ধরা পড়ে যায় বাড়ীর মালিক ক্বিৎফীরের কাছে। পরে যুলায়খার সাজানো কথামতে নির্দোষ ইউসুফের জেল হয়। যুলায়খা ছিলেন মিসররাজ রাইয়ান ইবনু অলীদের ভাগিনেয়ী। অন্যূন সাত বছর জেল খাটার পর বাদশাহর এক স্বপ্নের ব্যাখ্যা দানের পুরস্কার স্বরূপ তাঁর মুক্তি হয়। পরে তিনি বাদশাহর অর্থ ও রাজস্ব মন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং বাদশাহর আনুকূল্যে তিনিই হন সমগ্র মিসরের একচ্ছত্র শাসক। ইতিমধ্যে ক্বিৎফীরের মৃত্যু হ’লে বাদশাহর উদ্যোগে বিধবা যুলায়খার সাথে তাঁর বিবাহ হয়। বাদশাহর দেখা স্বপ্ন মোতাবেক মিসরে প্রথম সাত বছর ভাল ফসল হয় এবং পরের সাত বছর ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। দুর্ভিক্ষের সময় সুদূর কেন‘আন থেকে তাঁর বিমাতা দশ ভাই তাঁর নিকটে খাদ্য সাহায্য নিতে এলে তিনি তাদের চিনতে পারেন। কিন্তু নিজ পরিচয় গোপন রাখেন। পরে তাঁর সহোদর একমাত্র ছোট ভাই বেনিয়ামীনকে আনা হ’লে তিনি তাদের সামনে নিজের পরিচয় দেন এবং নিজের ব্যবহৃত জামাটি ভাইদের মাধ্যমে পিতার নিকটে পাঠিয়ে দেন। বার্ধক্য তাড়িত অন্ধ পিতা ইয়াকূবের মুখের উপরে উক্ত জামা রেখে দেওয়ার সাথে সাথে তাঁর দু’চোখ খুলে যায়। অতঃপর ইউসুফের আবেদন ক্রমে তিনি সপরিবারে মিসর চলে আসেন। ইউসুফ তার ভাইদের ক্ষমা করে দেন। অতঃপর ১১ ভাই ও বাপ-মা তাঁর প্রতি সম্মানের সিজদা করেন। এভাবেই শৈশবে দেখা ইউসুফের স্বপ্ন সার্থক রূপ পায় (অবশ্য ইসলামী শরী‘আতে কারু প্রতি সম্মানের সিজদা নিষিদ্ধ)। সংক্ষেপে এটাই হ’ল ইউসুফ (আঃ) ও ইয়াকূব পরিবারের ফিলিস্তীন হ’তে মিসরে হিজরতের কারণ ও প্রেক্ষাপট, যে বিষয়ে ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করেছিল মূলতঃ তাঁকে ঠকাবার জন্য।
পুরো ঘটনায় যেখানে প্রেমের কোন চিহ্ন নেই সেখান থেকে কিভাবে প্রেমকাহিনী সৃষ্টি হয়? এটাতো নবী ইউসুফ (আ:) প্রতি স্পষ্ট অপবাদ। অথচ তিনি ছিলেন পবিত্র ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link