বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা দ্বিতীয় টেস্টে যেন একদমই দিশেহারা হয়ে যায়। পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের খেলতেই পারলেন না। শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের বিপরীতে বাংলাদেশী স্পিনাররা ছিলো বিড়াল সরূপ। বিন্দু পরিমাণ ভয়ংকররূপ ধারণ করতে পারেনি। অন্যদিকে তাইজুলের ৫ উইকেট তেমন কৃতিত্বের দাবি রাখে না। বরং উইকেটগুলো দেওয়ার কৃতিত্ব শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের, বাংলাদেশকে ব্যাটিং এ পাঠাতে দ্রুত রান তোলার পার্শ্বপ্রতিক্রয়ায়।
বাজেভাবে হারার পর আর কি বলার থাকে। কিন্তু সিরিজ হারার পর বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক বললেন,প্রাপ্তির অনেক কিছুই আছে। সব বিবেচনা করলে কিছুই পাওয়ার নেই যা আছে সেই প্রথম টেস্টে। যা কিনা তাও ব্যাটিং–স্বর্গেময় উইকেটে। তবে সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ভালোই যাচ্ছিলো না সেই হিসেবে প্রথম টেস্ট ড্রটি স্বস্তিদায়ক হতেই পারে। এটাই হয়ত মুমিনুলের চোখে ‘প্রাপ্তি’।
দেখা যাক কি কি ‘প্রাপ্তি’ নিয়ে এলো দেশে -
৭ বছর পর বাইরের মাটিতে ড্র
প্রথম টেস্টের আগে বিদেশের মাটিতে সর্বশেষ টেস্ট ড্র করেছিল এই শ্রীলঙ্কা সফরেই ২০১৩ সালে। এরপর আরো বেশ কয়েকবার সুযোগ আসলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। দেখা গেছে নিজেদের ভুলে ড্রটি হারায় পরিণত হয়েছে। এবার আর ভুল হয়নি। বিদেশে টানা হারার বৃও থেকে বের হওয়াটাই একটা প্রাপ্তি হতে পারে।
ব্যক্তিগত কিছু অর্জন
শ্রীলঙ্কা সফরে বলতে গেলে একমাত্র ধারাবাহিক ছিলেন তামিম ইকবাল। টানা ৩ ইনিংসে ফিফটি করেছেন এমনকি তিনটিই সেঞ্চুরি করার সুযোগ ছিলো তামিমের জন্য এটাই বড় আফসোস হতে পারে তবে বিদেশে সেঞ্চুরি করার যে অপূর্ণতা তা মুমিনুল আর তরুণ ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন পূর্ণ করেছেন। মমিনুল পেয়েছেন তার ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরি। নাজমুল তার প্রথম সেঞ্চুরি পান। অন্যান্য ব্যাটসম্যানদের মধ্যে লিটন দাস, মুশফিকুর রহিমের মাঝে ধারবাহিকতার দেখা যায়।
এত সবকিছুর মধ্যে বড় সাফল্য পেস বোলিং এ। পেস বোলিং এ তাসকিনের অর্জনটাই বড় প্রাপ্তি। দুই টেস্টে নিয়েছেন আটটি উইকেট যা সিরিজে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সংখ্যাটা আরো বড় হতে পারত যদি না ফিল্ডারদের হাত থেকে ক্যাচ না পড়ত। এবার মনে হয় আবু জায়েদ সঙ্গী পেলেন। তাসকিনের উত্থান চার বছর পর আর বাংলাদেশ ক্রিকেট যেন খুঁজে পেল জায়েদের সঙ্গী। তাইজুলের ২য় টেস্টে ক্যারিয়ারের অষ্টম পাঁচ উইকেট পাওয়া বোলিং বিভাগে একটি প্রাপ্তি।
সাকিবের অভাব নেই
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০১৯ সালে সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ হওয়ার পর বিদেশের মাটিতে তিনটি টেস্ট খেলেছে এবং তিনটিই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে। প্রথম টেস্টে এমন ফল না হলেও দ্বিতীয় টেস্টে এমনটা হতে পারত। তবে প্রথম টেস্টে সাকিবের কোনো অভাব টের পায়নি টিম টাইগার্স। অধিনায়ক, কোচদের ধারাভাষ্য মতে বুঝা যায় টিম টাইগার্স সাকিবকে নিয়ে হাহুতাশ করেনি।
বোলার যখন পাচঁ
সাকিব যখন খেলেন তখন একজন বোলার বেশি খেলানো হয়। যখন থাকেননা একজন বোলার কমিয়ে ব্যাটসম্যান নেওয়া হয়। এমনও টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ যেখানে আটজন ব্যাটসম্যান ছিলো। এবার এসবের কিছুই করেনি টিম টাইগার্স। ৫ জন স্পেশালিষ্ট বোলার খেলিয়েছেন ডমিঙ্গো। যার মধ্যে তিনজন পেসার। দুই টেস্টেই ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করে গেছেন দুইজন বোলার। যা আমরা বাংলাদেশের টেস্টে আগে কখনো দেখিনি।
টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক দিক
দেশের মাটিতে অনেক সময় টিম টাইগার্সকে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেছে কিন্তু এবার বিদেশের মাটিতেও এমনই এক সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেছে। প্রথম টেস্টে টস জিতে পাল্লেকেলের সবুজ উইকেটে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় এমনকি প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেওয়ার জন্য ৫ জন বোলার নিয়ে নামানো হয় দলকে। বাংলাদেশ দলের জন্য টেস্টে এটাও একটা ইতিবাচক পরিবর্তনই।
এই প্রাপ্তি গুলো মিলে বড় কিছু হলে সফরটা ভালোই হত। এবার না হলেও ছোটোবড়ো প্রাপ্তি গুলো ভালো করার সাহস জাগাবে।